নিউজ ডেস্ক,
গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে উঠা অনিয়মের কিছু সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। রোববারের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ আটেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
গত ৫ নভেম্বর রোববার অনুষ্ঠিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচন। নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান আলম সাজু নৌকা প্রতীকে ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে বে-সরকারিভাবে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এ আসনের দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য এড. জিয়াউল হক মৃধা (কলার ছড়ি প্রতীক) পান ৩৭ হাজার ৫৭৭ ভোট। উপ-নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম রোববার রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনা করে।
এদিকে উপ-নির্বাচন চলাকালে আশুগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে প্রকাশ্যে সীল মারার অভিযোগ উঠে।
নিরুত্তাপ এ ভোট নিয়ে ভোটগ্রহন চলাকালে অনিয়মের অভিযোগ করেছিলেন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য এড. জিয়াউল হক মৃধা। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছিলেন আশুগঞ্জ উপজেলার ৭টি কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সীল ও জাল ভোট দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রে সরবরাহকৃত ভোটার তালিকার সাথে তাদের কাছে সরবরাহ করা তালিকার মিলনা থাকায় অনেক ভোটার ভোট দিতে এসেও ফিরে গেছেন।
তিনি জানান, আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আন্দিদিল, বড়তল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টেকেরপাড়, যাত্রাপুর নূরানিয়া মাদরাসা, নাওঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর-চারতলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সীল ও জাল ভোট দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তিনি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলমকে মৌখিক ভাবে অবহিত করেছেন। উপ-নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে গত ৭ নভেম্বর বিকেলে ইসি সচিব মোঃ জাহাংগীর আলম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-আসনের উপ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত রেখে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন।
৭ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপ-সচিব মোঃ আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে বিভিন্ন গনমাধ্যমে ভোটে অনিয়মের খবরের বিষয়ে তদন্ত করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ শাহগীর আলম অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ রুহুল আমিনকে নির্দেশ দেন। আর পুলিশ সুপার তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মোঃ জয়নাল আবেদীনকে নির্দেশ দেন।
তদন্ত কমিটি গত ৮ ও ৯ নভেম্বর আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ভোট কেন্দ্রের অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করেন। তাঁরা আনসার, পুলিশ, পোলিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাথে কথা বলেন এবং তাদের সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। তদন্তের দ্বিতীয় দিনে তদন্ত কমিটি আশুগঞ্জ উপজেলার বড়তল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তালশহর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও যাত্রাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নূরানীয়া হাফিজিয়া মাদরাসার ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন তদন্ত করেন। এরই মধ্যে ভোটে অনিয়ম নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
তবে সংশ্লিষ্ট দুটি কমিটির একটি সূত্রে জানা গেছে, উপ-নির্বাচনের আশুগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটে অনিয়ম পাওয়া গেছে। দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
তবে কমিশনের তদন্তে নিজের আস্থা নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধি জিয়াউল হক মৃধা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর দেওয়া অভিযোগ ও সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোট ছাপা হয়েছে। আশুগঞ্জের শরীফপুর কেন্দ্রের ভোট ছাপার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাৎক্ষণিক ভাবে নানা অনিয়ম বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাই যারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে দিয়ে তদন্ত করলে কোনো লাভ হবেনা। তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করা হলে প্রয়োজনে তিনি উচ্চ আদালতের শরনাপন্ন হবেন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোঃ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা গনমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও পরবর্তীতে পাওয়া ভিডিওগুলো আমলে এনে তদন্ত করেছি। তদন্ত কাজ শেষ। অল্প সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপ-নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম রোববার সন্ধ্যায় জানান, তদন্ত কাজ শেষ। কিছুক্ষনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ইসির কাছে জমা দেয়া হবে।