ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে কৃষি জমির সেচ পাম্পের সংযোগ চাইতে গিয়ে পিডিবির সহকারী প্রকৌশলী মোঃ তারেকুর রহমানের কাছে চরম অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মোঃ আনোয়ার হোসেন। রোববার প্রকৌশলীর কক্ষে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে আটকিয়ে তাকে চরম অপমান ও মারধোরের হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় সরাইলে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
রোববার দুপুরে সরাইল প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে এমনসব অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন। তিনি তার সাথে অশালীন আচরন করার দায়ে প্রকৌশলী মোঃ তারেকুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আনোয়ার হোসেনের এক স্বজন বোরো স্কীম পরিচালনা করেন। অন্যান্য বারের মতো এবারো ৪-৫ দিন আগে লাইন চার্জ ও বিল পরিশোধ করে সংযোগ পাওয়ার জন্য কাগজপত্র নিয়ে পিডিবি অফিসে দৌড়ঝাপ করছেন। কিন্তু সংযোগ পাচ্ছেন না। এদিকে কৃষকরা পানি না পাওয়ায় ক্রমেই ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছেন। বিষয়টি জেনে রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন পিডিবি অফিসে যান। দায়িত্বে থাকা সহকারি প্রকৌশলী তারিকুর রহমান অফিসে আসেন বেলা ১১টায়। পরে মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন নিজের পরিচয় দিয়ে ওই কর্মকর্তাকে সংযোগের বিষয়টি বললে ওই কর্মকর্তা লিখিত অভিযোগ চান। তার কথার উত্তরে আনোয়ার হোসেন সময় ক্ষেপন না করে কৃষক বাঁচাতে দ্রুতত সংযোগ দেয়ার অনুরোধ করেন।
এতে ক্ষেপে যান ওই প্রকৌশলী। এক পর্যায়ে দু’জনের মধ্যে বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে তারেকুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাকে বলেন, ‘কত মুক্তিযোদ্ধা আসছে আর যাচ্ছে, এসব গুনার সময় নেই এখন। তাঁকে স্যার না বলায় আরো ক্ষিপ্ত হয়ে অফিসের কর্মচারীদের মুক্তিযোদ্ধাকে আটকানোর নির্দেশ দেন ও বেঁধে রাখতে বলেন। এক পর্যায়ে কয়েকজন লোকে আনোয়ার হোসেনকে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে নিয়ে যান। নির্বাহী প্রকৌশলী অভিযুক্ত তারেককে না ডেকে শুধু মুক্তিযোদ্ধার সাথেই কথা বলেন। তিনি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে মুক্তিযোদ্ধাকে ঠান্ডা হওয়ার পরামর্শ দেন।
নির্বাহী প্রকৌশলীর এই আচরণে সন্তুষ্ট হতে না পেরে তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন আনোয়ার হোসেন।
এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, পরিচয় দেয়ার পরও প্রথম থেকেই ওই কর্মকর্তা আমার উপর ক্ষুদ্ধ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটাক্ষ করেন। আমার সাথে অশালীন ভাষায় কথা বলেন। এক পর্যায়ে সহকর্মীদের নির্দেশ দেন আমাকে আটক করে বেঁধে রাখতে। মারধর করারও হুমকি দেন। নির্বাহী প্রকৌশলী সহকারি প্রকৌশলীকে কিছু না বলে উল্টো আমার উপর দোষ চাপান। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজাকার ও জামাতের প্রেতাত্মা ওই দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করছি। এ ব্যাপারে সহকারী প্রকৌশলী মোঃ তারিকুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এখানে নতুন। তাঁকে (মুক্তিযোদ্ধাকে) চিনি না। জানিও না। ওই স্কীমের বিল পরিশোধ আছে কিনা আদৌ এখনো জানি না। লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। একটু সময় চেয়েছি। তিনি আমার উপর খুবই ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। তিনি আমার সাথে মারমুখী আচরণ করেছেন। তাই আমিও রাগান্বিত হয়ে কিছু বলেছি। তিনি একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার সাথে এমন আচরণ করতে পারেন না।
এ ব্যাপারে সরাইল পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) নওয়াজ আহমেদ খান মুক্তিযোদ্ধার সাথে ওই কর্মকর্তা তারিকের বাক-বিতন্ডা ও চেচামেচির কথা স্বীকার করে বলেন, সেচ লাইনের বিল পরিশোধের কাগজ প্রকৌশলী পায়নি। আমিও বিষয়টি জানি না। তাই সংযোগ দেয়া হয়নি। আজ রোববার জেনেছি কোন কর্মচারীর কাছে দিয়ে গেছেন। মুক্তিযোদ্ধাকে গালমন্দ আটক ও হুমকি দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। আমি তাঁর কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম। তিনি রাগ করে চলে গেছেন।