নিউজ ডেস্ক,
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহণে অনিয়মের অভিযোগের তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় নির্বাচনী এলাকার আশুগঞ্জ উপজেলার দুটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা উপ-সচিব মোঃ আতিয়ার রহমানের ১৪ নভেম্বর তারিখে স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
সাময়িক বরখাস্তকৃতরা হলেন, আশুগঞ্জ আব্বাস উদ্দিন খান সোহাগপুর মডেল কলেজের প্রভাষক (সমাজ বিজ্ঞান) হোসেন মোঃ হাবিবুর রহমান ও ইসলামী ব্যাংক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ শাখার সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ শফিউল্লাহ।
গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে হোসেন মোঃ হাবিবুর রহমান ৯৫ নং যাত্রাপুর নূরানীয়া হাফেজিয়া মাদরাসা ভোট কেন্দ্রের ও মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ১২৭ নং শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদের ২৪৪ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ শুন্য আসনে ৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৯৫নং যাত্রাপুর নূরানীয়া হাফেজিয়া মাদরাসা এবং ১২৭ নং শরীফপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হয়। নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার এবং পুলিশ সুপার মোঃ শাখাওয়াত হোসেনের মাধ্যমে পৃথক দুটি তদন্ত করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন মতে প্রকাশিত অনিয়নের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে সার্বিক পর্যালোচনা মোতাবেক ৯৫ নং যাত্রাপুর নূরানীয়া হাফেজিয়া মাদরাসা ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী প্রিজাইডিং অফিসার হোসেন মোঃ হাবিবুর রহমান ও ১২৭ নং শরীফপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ শফিউল্লাহ’র বিরুদ্ধে বর্ণিত অনিয়মের সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তিনি নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ এর উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ফলে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে অসদাচরণের দায়ে হোসেন মোঃ হাবিবুর রহমান ও মোহাম্মদ শফিউল্লাহকে নির্বাচন কমিশন ১৫ নভেম্বর থেকে ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত দুই মাস সময়ের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশ প্রদান করেছেন। একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে চাকুরিবিধি অনুযায়ী শৃঙ্খলামূলক কার্যধারা গ্রহণেরও আদেশ প্রদান করা হয়েছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, উল্লেখিত আদেশ মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণসহ পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ৭ দিনের মধ্যে গৃহীত ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।
শনিবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র বসাক জানান, আমাদের কাছে অফিসিয়ালি কোন চিঠি দেয়নি, তা দেওয়ার কথা নয়। এ বিষয়ে তাদের সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠাবে।
এর আগে গত ৭ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপ-সচিব মোঃ আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসককে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত ভোটে অনিয়মের খবরের বিষয়ে তদন্ত করে ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এরই প্রেক্ষিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ রুহুল আমিনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। অপর দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোঃ জয়নাল আবেদিনের নেতৃত্বে আরোও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
উল্লেখ্য, ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু নৌকা প্রতীকে ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা কলার ছড়ি প্রতীকে পান ৩৭ হাজার ৫৫৭ ভোট। এ নির্বাচনে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদেনে দুটি কেন্দ্রের ভোটে অনিয়ম পাওয়ায় ওই কেন্দ্র দুটোর ভোট বাতিল করে শাহজাহান আলম সাজুকে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশিত করে।