বাংলাদেশে আর মাত্র কিছুদিন পরেই পালিত হবে মুজিববর্ষ অনুষ্ঠান। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যার রয়েছে সীমাহীন অবদান, সারাজীবন দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য যিনি বিলিয়ে দিয়েছেন, তার জন্মশতবর্ষ পালিত হবে এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এ নিয়ে বিতর্ক করা অনুচিত।
মুজিববর্ষ পালন অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে অতিথি হিসেবে। যা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
মুজিববর্ষ নিয়ে আলেম উলামা তথা সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে কোনো বিরোধিতা আছে তা এখনো প্রমাণিত নয়।
যেবিষয়ে মতবিরোধ তা হলো মুজিববর্ষ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসাকে কেন্দ্রকরে।
নরেন্দ্র মোদি এমন একসময় বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে যেসময় তার নিজ দেশের মুসলমানদেরকে পাইকারি হারে গণহত্যা করা হচ্ছে।
আল্লাহর ঘর মসজিদের মিনারা ভাংচুর করে সেখানে কট্টর হিন্দুত্ববাদের সমর্থকদের পতাকা উড়িয়ে মসজিদের অবমাননা করা হচ্ছে, নর্দমা,পুকুর, খালবিলে,ট্রেনে মুসলমানদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে, মুসলমানদের বাড়ি ঘরে, মসজিদ মাদ্রাসায়, ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মুসলিম নারীদের উপর চালানো হচ্ছে বর্বরোচিত পৈশাচিক নির্যাতন,যা প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের হৃদয়ে শুধু আঘাত ই করেনি বরং বাংলাদেশের ১৬কোটি মুসলমান ক্ষুব্ধ বিক্ষুব্ধ।
মোদির বিরুদ্ধে রয়েছে এহেন জঘন্যতম গণহত্যা ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ।
বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন জালেমের বিরুদ্ধে মাজলুমের পক্ষে আমরণ লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন। সে-ই মহান ব্যক্তির জন্মশতবর্ষ অনুষ্ঠানে একজন কট্টর সন্ত্রাসীর উপস্থিতি বাংলাদেশের মানুষ মেনে নিতে পারেনা বিধায় আজ সারা দেশব্যাপী মোদির বিরুদ্ধে চলছে প্রতিবাদ, প্রতিদিন ই চলছে বিক্ষোভ।
মোদির বাংলাদেশে আসাকে কেন্দ্র করে আলেম উলামা ও সাধারণ মুসলমান তাদের ধর্মীয় জায়গা থেকে ই প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। এই প্রতিবাদে কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই।
ভারত আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে যে অবদান রেখেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়, এ-র জন্য আমরা ভারতের কাছে চিরঋণী। কিন্তু এর অর্থ এই না যে, ভারতের মুসলমানদের রক্তে যার হাত রঞ্জিত সেই মোদিকে মেনে নিবো।
শেখ মুজিবুর রহমান এ-র জন্মশতবর্ষ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে পাশে চায়, তবে কোনো সাম্প্রদায়িক উস্কানীদাতাকে নয়।
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের যারা অকৃত্রিম বন্ধু হয়ে সাহায্য করেছে বিশেষ করে গান্ধী পরিবার, হুসাইন আহমদ মদনী (রহঃ)এর পরিবার, তাদের দাওয়াত দেওয়ার মাধ্যমেই মুজিববর্ষ অনুষ্ঠানে ভারতের অংশগ্রহণ পূর্ণতা পাবে। অন্যথায় ভারতের রাষ্ট্রপতিকে ও অতিথি করা যেতে পারে।
বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে।
মোদির বাংলাদেশে আগমনকে কেন্দ্র করে দেশে আবার অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। আলেম উলামাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কেউ সুযোগ নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
আলেম উলামা যেমন রাজনীতির বাইরে থেকে শুধুমাত্র মানবতার পক্ষে দাড়িয়ে মোদির বাংলাদেশে আসার বিরোধিতা করছে, ঠিক সরকারকে ও মোদির বিষয়ে রাজনীতি না করে মানবতার পক্ষে, মানুষের পক্ষে দাড়িয়ে মোদির বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে আমার বাংলাদেশে যেনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এ-র জন্য আলেম উলামা, সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
লেখক: মুফতী মুহাম্মদ এনামুল হাসান
যুগ্ম সম্পাদক
ইসলামী ঐক্যজোট
ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলা।