স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোঃ উবায়দুল্লাহ-(৩০) নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক দপ্তরীকে বেদম মারধোর করে তার কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সদর মডেল থানায় কর্মরত এসআই (উপ-পরিদর্শক) জামিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে । গত শনিবার রাতে সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের খাকচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
আহত উবায়দুল্লাহকে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আজ সোমবার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আহত উবায়দুল্লাহ। উবায়দুল্লাহ সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের খাকচাইল গ্রামের ক্বারী নূরুল ইসলামের ছেলে এবং খাকচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী।
পুলিশ সুপারের কাছে দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগ ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার রাত ১০টার দিকে এসআই জামিরুল ইসলামের নেতৃত্বে সদর থানার ছয় পুলিশ সদস্য খাকচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। পরে তারা বিদ্যালয়ের দপ্তরী উবায়দুল¬ার কক্ষের দরজায় টোকা দেন। দরজা খোলার পর এখানে বশির নামে কেউ আছে কি-না জিজ্ঞেস করেন জামিরুল। এ নামে কেউ নেই বলার পর জামিরুল উবায়দুল¬ার পকেটে হাত দেন।
পকেট হাতিয়ে কিছু না পেয়ে আবার বলেন, বাচ্চু নামে কেউ আছেন কি-না। এরপর উবায়দুল¬াকে স্কুলের সকল কক্ষের দরজা খুলতে বলেন। পরে জামিরুলের সাথে থাকা অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা আবার উবায়দুল্লাহর পকেট চেক করার নামে কয়েকটি ইয়াবা ট্যাবলট ঢুকিয়ে দেন। এরপর জামিরুল উবায়দুল্লাহকে বলেন, তুই ইয়াবা ব্যবসা করিস। আর কোথায় ইয়াবা আছে বল। এর পরপরই জামিরুল ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা উবায়দুল¬াকে বেদম মারধোর করেন। তার মাথা ও দুই কানে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি দেয়া হয়। এতে উবায়দুল্লাহর বাম কানের পর্দা ফেটে যায়।
খবর পেয়ে রাতের বেলা উবায়দুল্লাহর বাবা ক্বারী নুরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসলে তাকেও আটক করে সাদা কাগজে জোর করে স্বাক্ষর নেন জামিরুল। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু তালেব এসে দুই হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে উবায়দুল্লাহ ও তার বাবাকে ছাড়িয়ে নেন। যাওয়ার সময় এ ঘটনা কাউকে জানালে উবায়দুল্লাহকে মাদক মামলায় ফাঁসানোরও হুমকি দেন জামিরুল। এদিকে রোববার সকালে আহত উবায়দুল্লাহকে প্রথমে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ও পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানো হয়।
এদিকে রোববার রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কার্যালয়ে আহত উবায়দুল্লাহর কাছ থেকে বিষয়টি অবহিত হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোঃ আলমগীর হোসেন এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ রেজাউল কবির। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় মেম্বারের উপস্থিতিতে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করেন আহত উবায়দুল্লাহ।
ঘটনা শুনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদ্বয় বিষয়টি লিখিত আকারে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দেয়ার জন্য আহত উবায়দুল্লাহকে পরামর্শ দেন। এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি শুনে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি।
তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত এসআই জামিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি খাকচাইল গ্রামেই যাইনি। এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তদন্ত করে যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে জামিরুলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন) মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, দপ্তরীকে মারধোর করার বিষয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে জামিরুলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি অবহিত হয়েছি, তদন্তে দোষী প্রমানিত হলে জামিরুলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে এস.আই জামিরুলের বিরুদ্ধে একই ধরনের আরো অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীরা জানান, সাধারণ মানুষের পকেটে ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করাই হচ্ছে জামিরুলের কৌশল।