Advertisement

তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র

NewsBrahmanbaria

এই আর্টিকেল টি ৩৬৬৬।

স্টাফ রিপোর্টার:

‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের এই স্লোগান অনেকটা ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ এর মতোই। দুর্নীতি যেন এ কারাগারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে! কারাগারে এক কেজি গরুর মাংসের দাম এক হাজার টাকা আর মুরগির মাংস ৭শ’ টাকা। এক হাত জায়গা মিলে তিন হাজার টাকায়। আর একটি মাত্র কম্বলের জন্য বন্দিদের গুনতে হয় পাঁচ হাজার টাকা। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের দুর্নীতির এমন ভয়াবহ চিত্র।

সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের দীর্ঘদিনের অনিময়-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা সুরক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (কারা অনুবিভাগ) সৈয়দ বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে তিনি সেবা সুরক্ষা বিভাগের উপসচিব (কারা-১) মো. মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। ওই তদন্ত কমিটি গত ৬ এপ্রিল ৫১ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্তে কারাগারের বন্দি বেচা-কেনা, স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাত বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য, খাবার বাণিজ্য ও চিকিৎসা বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতির প্রমাণ মিলে। এসব বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রতিদিন মোটা অংকের অর্থ আদায় করে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে ভাগ-বাটোয়ারা করার অভিযোগের সত্যতা পায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২৮ এপ্রিল সেটি পাঠানো হয় কারা মহাপরিদর্শক ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কারা কর্মকর্তার কাছে।

তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গত মে মাসে কারাগারের ২৭ কারারক্ষীর মধ্যে ২৬ জনকে একযোগে অন্যত্র বদলি করা হয়। আর সর্বপ্রধান কারারক্ষী আব্দুল ওয়াহেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে রহস্যজনক কারণে দুর্নীতির মূলে থাকা জেল সুপার, জেলার ও ডেপুটি জেলারসহ আরও আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৮ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে যোগাদান করেন জেল সুপার নূরন্নবী ভূঁইয়া। গত চার বছর ধরে তিনি এ কারাগারেই রয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে ধারাবাহিকভাবে সকল দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে ডেপুটি জেলার, জেলার এবং জেল সুপারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে বলে উল্লেখ করা হয়।

দুগ্ধপোষ্য শিশুদের মাঝে নিমানের দুধ সরবরাহ এবং অন্য কোনো খাবার শিশুদের মাঝে সরবরাহ না করার অমানবিক ও নির্মম আচরণ প্রদর্শনসহ দায়িত্বে অবহেলার সাথে সর্বপ্রধান কারারক্ষী মো. আব্দুল ওয়াহেদ সরাসরি জড়িত বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এ কাজে হাসপাতালের ডিপ্লোমা নার্স মো. নাজিরুল ইসলামও জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

কারাগারে বন্দি বেচা-কেনা ও সিট বাণিজ্যের সাথে সর্বপ্রধান কারারক্ষী আব্দুল ওয়াহেদ, সহকারী প্রধান কাররক্ষী মো. নাছির উদ্দিন, মো. মন্তাজ মিয়া, মো. সেলিম মিয়া, বাদল মিয়া, কারারক্ষী মফিজুর রহমান, নাজমুল হোসেন (নং ২২৮৫৬), নাজমুল হোসেন (নং ২২৫৯৭), আল আমিন, হাবিবুর রহমান ও ফজলুল হক এবং স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ বাণিজ্যের সাথে সর্বপ্রধান কাররক্ষী আবদুল ওয়াহেদ, প্রধান কারারক্ষী নজরুল ইসলাম, এনায়েত উল্লাহ, সুব্রত মৎসুদ্দী, ইকবাল হোসেন, গেইট অর্ডার সহকারী প্রধান কারারক্ষী হুমায়ুন কবির, কারারক্ষী জহিরুল ইসলাম ও হাবিবুর রহমানের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে তদন্তে।

কারাগারের অভ্যন্তরে মাদকসহ নিষিদ্ধ মালামাল প্রবেশ ও ব্যবহার সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতিতে সর্বপ্রধান কারারক্ষী আব্দুল ওয়াহেদ, সিআইডি সহকারী প্রধান কারারক্ষী মো. নাছির উদ্দিন, সহকারী প্রধান কারারক্ষী মো. মন্তাজ মিয়া, মো. সেলিম মিয়া, বাদল মিয়া, সিআইডি কারারক্ষী মফিজুর রহমান, কারারক্ষি নাজমুল হোসেন, আল আমিন, নাজমুল হোসেন, হাবিবুর রহমান, ফজলুল হক, জহিরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, গেইট অর্ডার সহকারী প্রধান কারারক্ষী হুমায়ূন কবির, প্রধান কারারক্ষী নজরুল ইসলাম, এনায়েত উল্লাহ ও জামিন বাণিজ্যের সাথে কারারক্ষী হেলাল উদ্দিন, পিসি বাণিজ্যের সাথে সর্বপ্রধান কারারক্ষী আবদুল ওয়াহেদ, প্রধান কারারক্ষী নজরুল ইসলাম, এনায়েত উল্লাহ, সুব্রত মৎসুদ্দী, ইকবাল হোসেন, কারারক্ষী নূর মোহাম্মদ, মো. ইমাম হোসেন, রিয়াদ মাহমুদ, হেলাল উদ্দিন ও রাসেল খান জড়িত বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

জেলা কারাগারের ক্যান্টিনের বিপরীতে অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের সাথে কারারক্ষী রনি দে, হাবিবুর রহমান, আল আমিন এবং হিসাব রক্ষক মো. নাজিম উদ্দিন, ডেপুটি জেলার হুমায়ূন কবির, জেলার এ.জি মাহমুদ এবং জেল সুপার নূরন্নবী ভূঁইয়া সরাসরি জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া নিমানের খাবার সরবরাহের সাথে ডেপুটি জেলার হুমায়ুন কবির, জেলার এ.জি মাহমুদ এবং জেল সুপার নুরুন্নবী ভূঁইয়া সরাসরি জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

কারাগারের হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে কারারক্ষী শরীফ উদ্দিন, সহকারী সার্জন মো. হুমায়ূন কবির রেজা ও ডিপ্লোমা নার্স মো. নাজিরুল ইসলামের সরাসরি জড়িত থাকার কথা বলা হয় প্রতিবেদনে।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা প্রতিবেদনে তাদের মতামতে বলেন, সকল বন্দিরা জানিয়েছেন ডেপুটি জেলার, জেলার ও জেল সুপার ইচ্ছে করলে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি এক মিনিটেই বন্ধ করতে পারেন। কিন্তু তারা তা না করে আশ্রয় নিয়ে থাকেন।

কারাগারে আটক কয়েদি/হাজতী বন্দিগণ কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে প্রচ- ভয় করে। তাদের অনৈতিক কর্মকা- প্রকাশ করা হলে তাদেরকে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এ নির্যাতন কাজে প্রভাবশালী বন্দি এবং রাইটারদেরকে ব্যবহার করা হয় বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

তবে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের জেল সুপার নুরুন্নবী ভূঁইয়া বলেন, বেনামি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত হয়েছে। একটা অভিযোগের সুনির্দিষ্ট অভিযোগকারী থাকতে হবে, সাক্ষী লাগবে, ঘটনার স্থান থাকতে হবে। হাওয়ার ওপরে বলে দিলাম অমুকে এই কাজ করেছে তাহলেতো হলো না। আমরা এর জবাব দেব।

যদিও জেল সুপার এ.জি মাহমুদ বলেন, কারাগার নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার কারণেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

Advertisement

Sorry, no post hare.

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com