স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তান্ডবের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন থানায় ৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দায়েরকৃত ৪৯টি মামলার মধ্যে সদর মডেল থানায় ৪৩টি, আশুগঞ্জ থানায় ৩টি, সরাইল থানায় ২টি ও আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে সদর মডেল থানায় ৩টি মামলা দায়ের করা হয়।
এসব মামলায় এজাহারনামীয় ২৮৮জন সহ অজ্ঞাতনামা ৩৫ হাজার লোককে আসামী করা হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তারকৃত ১৬জনসহ এসব মামলায় মোট ৫৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ৫৫ জনের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের কোন নেতা-কর্মী নেই।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতালের দিন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুরকারী আরমান আলিফ-(২২)। আলিফকে গ্রেপ্তারের পর তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কাজীপাড়ার ভাড়াটিয়া বাসায় তল্লাশী চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গার কাজে ব্যবহৃত একটি শাবল, একটি বিদেশী পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন এবং ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। গ্রেপ্তারকৃত আরমান আলিফ জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের ফুলকারকান্দি গ্রামের শুক্কুর মিয়ার ছেলে। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কাজীপাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে।
পুলিশ জানায়, তান্ডবের সময় ভিডিও ফুটেজ ও স্থির ছবি দেখে হামলাকারিদের শনাক্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করে তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। হেফাজত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুলিশ ও মামলার নথিপত্র সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটে যাওয়া তান্ডবে ৪৯টি মামলার মধ্যে সদর থানায় ৪৩টি, আশুগঞ্জ থানায় ৩টি, সরাইল থানায় ২টি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে ৩৯টি মামলার আসামী সবাই “ অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারী”। বাকী ১০টি মামলায় ২৮৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। কোনো কোনো মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা কওমি মাদ্রাসাছাত্র-শিক্ষক ও তাঁদের অনুসারী দুষ্কৃতিকারীদের’ কথা উল্লেখ করা হয়। তবে কোনো মামলাতেই হেফাজতের কোনো নেতা-কর্মীর নাম নেই।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবদুর রহিম বলেন,তান্ডবের সময় ভিডিও ফুটেজ ও স্থির ছবি দেখে হামলাকারিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেককেই শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার থেকে গনমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের সহিংস ঘটনায় বিভিন্ন স্থির চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ দেখে বিশ্লেষনপূর্বক আসামীদেরকে সনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থির চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষন করে বাকী আসামীদেরকে গ্রেপ্তারের জন্য জেলা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
উল্লেখ্য স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তান্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরাল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে থাকার দু’দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলার প্যান্ডেল, একই চত্বরে থাকা শহর সমাজসেবা প্রকল্পের অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের অফিস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয়, পৌর মেয়রের বাসভবন, সুর স¤্রাট আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ব্যক্তিগত অফিস, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, সার্কিট হাউজ, জেলা পরিষদ কার্যালয় ও ডাকবাংলো, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা ভবন, সুর স¤্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, মাতৃ সদন, এসিল্যান্ডের কার্যালয়, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের বাসভবন, তার শ্বশুরের বাড়ি, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কালীবাড়ি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন, আশুগঞ্জ টোলপ্লাজা, আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আবু নাছেরের বাসভবন, বিজয়সনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বাসভবন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়সহ প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে।