নিউজ ডেস্ক,
অযত্ন আর অবহেলায় প্রায় বিলীনের পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী টাউন খাল। তিতাস নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারের টাউন খালকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল এই শহরের প্রাচীন বাণিজ্যিক কেন্দ্র। অথচ সেই খালই এখন অস্তিত্ব হারিয়ে বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খালটির বিভিন্ন অংশে কচুরিপানা জমে এখন পানির দেখা মিলে না। বছরের পর বছর পার হলেও খালটি রক্ষায় পুনঃখনন বা সুপরিকল্পিত উদ্যোগ না নেওয়ায় খালের বেশিরভাগ অংশ ভরাট হয়ে গেছে। আর যাও অবশিষ্ট রয়েছে তাতেও বর্জ্য ফেলে ভরাট হওয়ার পথে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্রমাগত দখল আর দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসা খালটিকে রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। তাদের মতে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ না নেওয়ায় আগের রূপে ফিরছে না শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া এ খাল। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালটিকে স্বরূপে ফিরিয়ে আনতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও পুনঃখননসহ নানামুখী পরিকল্পানা রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার টাউন খালে এক সময় ছিল পানির প্রবলপ্রবাহ। তিতাস নদীর কান্দিপাড়া থেকে গোকর্নঘাট পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করা খালটি দিয়ে এক সময় বড় বড় নৌকায় করে ঢাকা, ভৈরব, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য আনা নেওয়া করা হতো। গৃহস্থালির নিত্যদিনের কাজও করা হতো এ খালে। কিন্তু এখন সে সবই অতীত। তিতাস নদীর কান্দিপাড়া পয়েন্ট থেকে খালটির উৎপত্তি। শহরের পানি নিষ্কাশনে খালটি ভূমিকা রাখলেও তা নিয়ে কারও কোনো চিন্তা নেই। খালের দুপাশে থাকা বিভিন্ন বাড়ি ঘরের বর্জ্য, বিভিন্ন দোকান, মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁর বর্জ্য ফেলার জায়গা হয়ে উঠেছে ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলা খালটি। কালো পানি আর চারপাশ ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধ এখন স্থানীয়দের নাভিশ্বাস।
স্থানীয়রা জানায়, সাধারণ মানুষের অসচেতনতা আর নগর পরিকল্পনাবিদদের উদাসীনতায় খালটি প্রায় হারিয়েই গেছে। খালটিতে পানি নেই, বিভিন্ন জায়গা ভরাট হয়ে গেছে। খালটি ভরাট হতে হতে উঁচু হয়ে যাওয়ায় তিতাস নদীর যে পয়েন্ট থেকে খালের উৎপত্তি সেই পয়েন্টে ওয়াটার লেভেল সমন্বয় হচ্ছে না। এতে খালে পানিপ্রবাহ নেই। তাই খালটিকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনলে ঐতিহ্যবাহী খালটি আবারও পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠবে।
নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক আন্দোলন ‘তরী বাংলাদেশের’ আহবায়ক মোঃ শামীম আহমেদ বলেন, কালের বিবর্তনে খালের অনেক অংশ এখন দখলদারদের কবলে রয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও উদ্ধার হওয়া জায়গাগুলোতে আবারও দখলদাররা ফিরে আসছে। এতে সাধারণ মানুষ অনেকটাই হতাশ। খালটির দুপাশে অপরিকল্পিতভাবে সিসি ব্লক বসানোয় খালের প্রশস্থতা ও গভীরতা দুটিই কমেছে। খালটি এখন প্রায় মৃত। আমাদের দাবি দ্রুত এসব সিসি ব্লক অপসারণ করে পরিকল্পিতভাবে রিটার্নিং ওয়াল করে নদী সমমান খনন করে খালের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হোক। এতে একদিকে যেমন খালটি বেঁচে যাবে, তেমনি এই খালকে ঘিরে শহরে একটি পর্যটন নগরীও গড়ে উঠবে।
এ বিষয়ে পৌর সভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল কুদ্দুস জানান, টাউন খাল পরিচ্ছন্ন করতে অভিযান চলছে। দ্রুতই খালটিকে পরিষ্কার করা হবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো: শাহগীর আলম বলেন, টাউন খালের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পৌরসভাসহ জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে বেশ কয়েকবার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এ ছাড়া সিএস দাগ ধরে একশর মতো অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে অবশিষ্ট কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি। এ ছাড়া টাউন খালের পাশাপাশি আখাউড়ার কালন্দি খালের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে যদি এ খালগুলো খননের জন্য যুক্ত করা যায় তাহলে খালগুলো খনন করা হবে।