স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরের বিরুদ্ধে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি, কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ, সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত রাস্তা ও দেয়াল নির্মাণের নানান অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক বলছেন অভিযোগটি দেখে ও তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলছেন তিনি এই সংক্রান্ত অনিয়মে সাথে জড়িত না।
সরাইল উপজেলা সৈয়দ টুলা গ্রামে মোশারফ উদ্দিন ও কুট্টাপাড়া গ্রামের শেখ আবুল কালাম উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে উপজেলায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বিভিন্ন প্রকল্প কাগজে কলমে বাস্তবায়ন দেখিয়ে দরপত্র ও পিআইসি কমিটি মাধ্যমে নামে-বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন। তিনি নিজ বাড়ির জন্য উপজেলা ডাক বাংলোর পশ্চিম পাশ দিয়ে সরকারি জায়গার ওপর দিয়ে সরকারি খরচে ২০-২৫ ফুট প্রশস্থের রাস্তা এবং রাস্তার পশ্চিম পাশে বিনা প্রয়োজনে দেয়াল নির্মাণ করেছেন।
লিখিত অভিযোগ থেকে আরও জানা যায় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায় উপজেলার হালুয়াপাড়া সেতু থেকে আরিফাইল রাস্তার সদর স্কুল সংলগ্ন স্থানে রাস্তার প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ, ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায় বিভিন্ন ইউনিয়নের দরিদ্র পরিবারের মধ্যে নলকূপ স্থাপন, ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় বিভিন্ন ইউনিয়নের দরিদ্র পরিবারের মধ্যে শৌচাগারের চাকতি (রিং ¯ø্যাব) সরবরাহ, ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় পাকশিমুল লম্বা ভিটা মসজিদের সামনে ঘাটলা নির্মাণ, ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় কালীকচ্ছ মধ্য রাস্তার শাহজাহানের বাড়ির সামনে পানি নিষ্কাশনের নালা নির্মাণ, ২ লাখ টাকায় অরুয়াইল দক্ষিণ বাজার বিএডিসি সংলগ্ন চেত্রা নদী ও তিতাস নদের পাড় পর্যন্ত গাইড ওয়াল ও র্যাম্প নির্মাণ, ২ লাখ টাকায় অরুয়াইল বাজারের দক্ষিণ পাশে জনগণের ওঠানামার জন্য সিড়িসহ ঘাটলা নির্মাণ, ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় উপজেলার লোপাড়া তিতাস রোডের বারেক মিয়ার বাড়ির উত্তর পাশে প্রতিরক্ষা দেয়ালের অবশিষ্ট অংশ নির্মাণ এবং ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় চুন্টা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের দক্ষিণ পাশের প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ প্রকল্পের ও কাজের কোনো অস্থিত্ব নেই। উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর এসব প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া দরপত্র প্রকল্প-১ এর প্যাকেজ-৬ প্রকল্প কালীকচ্ছ নন্দীপাড়া তকদির চেয়ারম্যানের পুকুরে রাস্তার পাশে রিটার্নিং দেয়াল নির্মাণেরও কোনো অস্থিত্ব পায়া যায়নি।
অভিযোগকারী মোশারফ উদ্দিন ও শেখ আবুল কালাম জানান ২০১৯-২০ অর্থ উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) তে নামে বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে কোটি টাকার উপরে আত্মসাৎ করেছেন। তাঁরা দাবি করেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো তদন্ত করলেই বের হয়ে আসবে। তাই জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তাঁরা। এছাড়া অভিযোগের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে তারা জানান।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, এডিপির অধিকাংশ প্রকল্প দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিকাদার কাজ করে থাকেন। আমি কীভাবে টাকা আত্মসাৎ করব? আমি এই সংক্রান্ত অনিয়মের সাথে কোন ভাবেই জড়িত না।
এই বিষয়ে সরাইল উপজেলা প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) নিলুফা ইয়াছমীন জানান কাজের মান দেখে বিল দেওয়া হয়েছে। সব প্রকল্প তিনি ঘুরে দেখা সম্ভব না বলে তিনি জানান।
তবে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এস এম মোসা জানান, কোনো প্রকল্প যদি বাস্তবায়ন না হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বেশ কয়েকটি প্রকল্প সরেজমিনে বাস্তবায়ন হতে দেখেছেন তিনি। সবগুলো ঘুরে দেখা সম্ভব হয়নি।
এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগটি দেখে ও তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।