সরাইল প্রতিনিধি:
সরাইলে হত্যা মামলার আসামী ও তাদের স্বজনদের বসতবাড়িতে চলছে ভাংচুর লুটপাট তান্ডব। উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বুড্ডা ও ক্ষমতাপুর গ্রামে চলমান এ তান্ডবে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুরুষশুন্য হয়ে পড়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না অর্ধশতাধিক শিশু শিক্ষার্থী।
দিনে আতঙ্ক আর নির্ঘুম রাত কাটছে মহিলাদের। আদালত জামিন দিলেও গ্রামে প্রবেশের জামিন মিলছে না মামলায় অভিযুক্তদের। সরজমিনে ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারের ঘটনার জেরে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে বুড্ডা গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য অলি আহাদ ও সালিসকারক মো. শেখ মো.শাসমু মিয়ার লোকজন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ওই সংঘর্ষে বল্লমের আঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন শামসু মিয়া।
১৫ সেপ্টেম্বর শামসু মিয়ার ছেলে হাসেন মিয়া বাদী হয়ে অলি আহাদকে প্রধান আসামী করে মোট ২৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় আসামীও তাদের কিছু স্বজন। সুযোগে গভীর রাতে দল বেঁধে আসামী ও তাদের স্বজনদের বসতঘরে চলে ভাংচুর লুটপাট তান্ডব।
ধান চাল আসবাবপত্রের সাথে ছিনিয়ে নিতে থাকে গরু বাছুরও। বাদ পড়েনি ইঞ্জিনচালিত নৌকা, টিউবওয়েল ও ড্রেজার। বাড়িতে থাকা মহিলা যুবতি ও শিশুদের আতঙ্ক বেড়ে যায়। আহারের সমস্যায় ভুগছেন অনেক পরিবার। পুরুষশুন্য পরিবার গুলোর দিন কাটছে চরম আতঙ্কে। আর রাত কাটছে নির্ঘুম। ভয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না অর্ধশতাধিক শিশু শিক্ষার্থী। চলমান জেএসসি পরীক্ষা ব্যহত হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীর। উচ্চ আদালত থেকে জামিনে এসেও প্রতিপক্ষের বাঁধায় অভিযুক্ত কেউ গ্রামে প্রবেশ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তারা।
দুই গ্রামের যাদের বসতঘর লুটপাট হয়েছে তারা হলেন- চান্দু মিয়া, বাবুল মিয়া, জিতু মিয়া, জুরু মিয়া, মোহিদ মিয়া, হুমায়ুন মিয়া, অহিদ মিয়া, অলি আহাদ, আওয়াল মিয়া, ছোটন মিয়া, শিরু মিয়া, মুসা মিয়া, আজিজুল, শামসুল মিয়া, কালা মিয়া, আফতাব মিয়া, আঞ্জু মিয়া, আরিফুর, জাহের আলী, আলতাফ আলী, কবির, জাকির, লতিফ, আ. জলিল, জিনু মিয়া, জুয়েল, সুমন, নূরু মৃধা ও শাহান শাহ মৃধা। ক্ষমতাপুরের চান মিয়া (৬২) বলেন, লুটপাটের পাশাপাশি মহিলাদের মারধর ও লাঞ্ছিত করছে। বুড্ডা গ্রামের আজিজুল ইসলাম (৪৫) বলেন, ঘটনার পর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়–য়া আমার শিশু কন্যা লামিয়া, রাব্বি ও লাইতুন স্কুলে যেতে পারছে না। মামলার প্রধান আসামী (জামিনে থাকা) ইউপি সদস্য অলি আহাদ বলেন, সংঘর্ষে কার আঘাতে শামসু মিয়া মারা গেছেন কেউ বলতে পারছেন না।
এ ঘটনার পেছনের মূল হোতা শামীম। শামীমই তাদেরকে ফুঁসলিয়ে আমি সহ অনেক নিরপরাধ লোককে আসামী করিয়ে বাড়ি ছাড়া করেছে। লুটপাটসহ বিভিন্ন অপকর্মের পরিকল্পনাকারী শামীম। তার নারী কেলেংকারীসহ অগণিত অন্যায়ের বিচার করেছি। জামিনে আসার পর তারা রাস্তাঘাটে লাঠি নিয়ে বসে থাকে। ফলে লোকজন এলাকায় যেতে পারছে না। শামীম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, খুনের ঘটনার পর এমন ভাংচুর লুটপাট হয়েই থাকে। নিহত শামসু মিয়ার ভাতিজা মো.আবু তাহের (৪৮) বলেন, কোন ধরনের লুটপাট হয়নি।
এ গুলো তাদের সাজানো নাটক। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, তাদের অভিযোগ গুলো সঠিক নয়। এখানে হত্যার পর মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলে। বুড্ডার ঘটনাও অনুরুপ। নিজেরাই মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নাটক করছে। মূল উদ্যেশ্য হচ্ছে কাউন্টার মামলা করা। মিথ্যা মামলা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।