Advertisement

রাজনীতি থেকে সাংবাদিকতা, জীবনের গল্প

NewsBrahmanbaria

এই আর্টিকেল টি ১১৮২।

মোঃ বাহারুল ইসলাম মোল্লা:

সাংবাদিকতা করব ভাবিনি কখনো। রাজনীতির প্রতি ছিলো প্রবল আগ্রহ। ছাত্র জীবনে রাজনীতি করেছি। আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রভাগে থেকেছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারিনি। পড়াশুনা শেষ করে জীবন-জীবিকার তাগিদে নেমে পড়ি ঠিকাদারী ব্যবসায়। সেখানেও সফলতা আসেনি। প্রবাদে আছে ভাগ্যের লিখন, যায়না খন্ডন। শেষ পর্যন্ত নানা প্রতিবন্ধকতা, বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার রহমতে এখন আমি মহান পেশা সাংবাদিকতার সাথে জড়িত আছি। দীর্ঘ এই চলার পথে অপ্রত্যাশিতভাবে অনেক কিছু পেয়েছি, আবার প্রত্যাশিত অনেক কিছুই পাইনি।

এতে আপেক্ষ আছে, তবে হতাশা নেই। ধাক্কা খেতে খেতেই বড় হয়েছি। সজোরে ধাক্কায় কখনো কখনো থমকে গেছি, কিন্তু ছিটকে পড়িনি। এগিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেছি। ধাক্কা যে মানুষকে শুধু পেছনেই ফেলে দেয়, তা কিন্তু নয়। অনেক সময় ধাক্কায় মানুষ এগিয়েও যায়। বাঁধা-বিপত্তিতে পড়ে মানুষ নিজেকে নিয়ে ভাবে।

আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছেন, যারা মানুষকে অহেতুক ধাক্কা দিয়ে আনন্দ পান। আবার অনেক মানুষ আছেন, যারা বিপদে পড়া মানুষকে নানা ভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেন। যারা অহেতুক মানুষকে নিয়ে ধাক্কাধাক্কি করেন, তারা ক্ষনিকের জন্য আনন্দ পেলেও এক সময় তারা নিজেরাই খাদের কিনারে চলে যান। দীর্ঘ চলার পথে আমি বহুবার ধাক্কা খেয়েছি। এতে হৃদয়ে রক্তক্ষরন হয়েছে, তবু কাউকে বুঝতে দেইনি। ঘুরে দাঁড়াতে যদিও কষ্ট হয়েছে, তবু হাসি মুখে তা মেনে নিয়েছি। কখনো আশাহত হইনি। বুকে সাহস নিয়ে নতুন উদ্যমে পুনরায় শুর“ করেছি। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত টিকে আছি। তবে জানিনা কতদিন পারব। ধাক্কা খেলে মানুষের মনোবল ভেঙ্গে যায়, স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ হারিয়ে যায়।

আব্বার স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে একদিন আমি সরকারি চাকুরী করব, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হব। আমার অন্যান্য ভাই-বোনেরা আব্বার স্বপ্ন পূরন করতে পারলেও আমি পারিনি, আমি ব্যর্থ হয়েছি। কলেজ জীবনে ছাত্র রাজনীতি করেছি। মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের প্রতিটি গনতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দেশের সর্ববৃহৎ একটি ছাত্র সংগঠনের জেলা কমিটিতে সম্মানজনক পদও পেয়েছি। সম্মানের সাথেই করেছি ছাত্র রাজনীতি। ছাত্র রাজনীতি করার সময় বহুবার হামলা-মামলা, নির্যাতনের শিকার হয়েছি।

১৯৯১ সালে বিএসএস (গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী) পাশ করার পর ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে যুব রাজনীতিতে যোগ দেই। সেখানেও জেলা কমিটিতে সম্মানজনক পদ লাভ করি। রাজনীতিতেই তখন আমার খুব আগ্রহ ছিলো। রাজনীতি করতে গিয়ে এক সময় মূল দলের প্রভাবশালী একজন নেতার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে মত বিরোধ হওয়ায় কারনে শ্রদ্ধেয় নেতার চরম বিরাগভাজন হই।

পরে নেতার ধাক্কায় রাজনীতির মাঠ থেকে আউট হই। রাজনীতিতে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। এক পর্যায়ে ছেড়ে দেই রাজনীতি। পরে জীবন-জীবিকার তাগিদে শুর“ করি ঠিকাদারী ব্যবসা। প্রথম কয়েক বছর ব্যবসায় সফলতা আসলেও একটি বড় কাজে (প্রকল্প) সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে “খুশী” করতে না পারার অপরাধে ওই কাজে বিরাট অংকের টাকা লোকসান দেই। প্রকৌশলীর ধাক্কা খেয়ে ছেড়ে দেই ঠিকাদারী ব্যবসা। আমার নামে থাকা “মেসার্স এন.ইসলাম কন্সট্রাকশন” নামক ঠিকাদারী ফার্মের লাইসেন্সটাও আর নবায়ন করিনি।

ঠিকাদারী ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়া মাদরাসা রোডের জমিলা ম্যানশনের দোতলায় “ ক্যাপিটেল কম্পিউটার্স” নামক একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার গড়ে তুলি। সেখানে কয়েক বছর ব্যবসা করার পর আগ্রহ জাগে সাংবাদিকতা করার। আমার ঘরনীসহ পরিবারের লোকজনও এতে রাজী হন।

২০০১ সালের প্রথম দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংবাদপত্র জগতের কিংবদন্তি আলহাজ্ব নূর“ল হোসেন সম্পাদিত “দৈনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাব-এডিটর হিসেবে যোগ দেই। সেখানে কয়েক বছর কাজ করার পর জাতীয় পত্রিকায় কাজ করার সুযোগ খুঁজতে থাকি। পরে অনেক দৌড়-ঝাপ করে “দৈনিক খবর” পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করি।

দৈনিক খবরে বছর দু’য়েক কাজ করার পর যোগ দেই দেশের পাঠক নন্দিত পত্রিকা“ দৈনিক যায়যায়দিন” পত্রিকায়। বর্তমানে আমি দৈনিক যায়যায়দিন এর স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছি। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি আমি দৈনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্বও গ্রহণ করি। তিন বছর দায়িত্ব পালন করে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি দৈনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব ছেড়ে দেই।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথেও জড়িত হই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটিতে পর পর দু’বার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হই। এছাড়াও সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন পরিচালনা কমিটির সদস্য, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি পাঠাগার পরিচালনা কমিটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা শিক্ষা কমিটি ও সদর উপজেলা বিশুদ্ধ খাদ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।

বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনিটের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবেও তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছি। জীবনে চলার পথে অদৃশ্য কারনে যেমন অনেকের ধাক্কা খেয়েছি, আবার অনেকের কাছ থেকে অনুপ্রেরনাও পেয়েছি। যাদের কাছে ধাক্কা খেয়েছি, আমি তাদের সকলের জন্য দোয়া করি, তাদের সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

যে সকল বন্ধু ও কাছের মানুষ আমাকে এগিয়ে যেতে পদে পদে সাহায্য-সহযোগীতা করেছেন, এখনো করছেন, তাদের প্রতি রইল আমার কৃতজ্ঞতা ও হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা। যদি জীবনে কোনদিন সুযোগ আসে, সুযোগ পাই, তাহলে ওইসব বন্ধু ও কাছের মানুষদের সাহায্য-সহযোগীতার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করবো। যদি পারি তাহলে নিজেকে স্বার্থক মনে করবো। ঋনের বোঝাটাও কিছুটা হালকা হবে বলে মনে করি। আপনার আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কাজ করতে পারি।

Advertisement

Sorry, no post hare.

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com