বিশেষ প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অভাবনীয় উন্নয়নের রূপকার, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ এর আর্টিক্যাল ২০(১) (ই) অনুযায়ী র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপিকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার (২৬.০৫.২০১৯) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য মনোনীত করেন।
উল্লেখ্য, র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চিনাইর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম মোঃ আবদুর রউফ চৌধুরী, মাতার নাম মোছাম্মৎ হালিমা খাতুন চৌধুরী। তিনি ১৯৬৯ সালে মাদ্রাসা-ই আলীয়া, ঢাকা থেকে ফাজিল, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঢাকা কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়েই বঙ্গবন্ধু পুত্র শহীদ শেখ কামালের সাথে তার পরিচয় ঘটে।
১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকা কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সনে তিনি তদানিন্তন পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে মোকতাদির চৌধুরী বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্টের (মুজিব বাহিনী) গেরিলা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তী সময়ে তৎকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার জোন বি-এর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর যুদ্ধাঞ্চলে তিনি আজও একজন কিংবদন্তি যোদ্ধা হিসেবে জনগণের মাঝে পরিচিত হয়ে আছেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে তিনি যুদ্ধে আহত হয়ে চিকিৎসার জন্যে ভারতে চলে যান।
স্বাধীনতা উত্তর সময়ে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ সময়ে তিনি ছাত্রলীগের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র রচনার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত ‘ছাত্র সমাজের শিক্ষা কমিশন’ -এর সদস্য মনোনীত হন। এ কমিশন তাদের রিপোর্ট ড.কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের কাছে প্রস্তাবাকারে পেশ করেছিল। ১৯৭৫ সালে তিনি বাকশালের অঙ্গ সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের ২১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে স্বৈরশাসক ইয়াহিয়ার সামরিক বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। ২০০৫ সালে তিনি সিভিল সার্ভিসের চাকুরী থেকে পদত্যাগ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জনকল্যাণে নিরলসভাবে কাজ শুরু করেন।
মোকতাদির চৌধুরী ১৯৮৬ সালে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসন থেকে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হন। পরে তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি একজন লেখক, প্রবন্ধকার ও সুবক্তা। তার প্রকাশিত গ্রন্থঃ- (১) বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এবং বিবিধ প্রসঙ্গ (২) ইসলাম, সন্ত্রাসবাদ, রাজনীতি, (৩) সময়ের কথকতা (৪) দুরারোগ্য সময় এবং গণতন্ত্রের অভিযাত্রা (৫) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঃ জীবন ও কর্ম (৬) ইসলামের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল (৭) স্বাধীনতা গণতন্ত্র ও সময়ের কতকথা, ৮) অন্যআলোয় জাতির জনক উল্লেখযোগ্য। তিনি পাক্ষিক সাময়িকী ‘মত ও পথ’ এর প্রকাশক ও সম্পাদক।