এনবি ডেস্ক:
হজরত মোল্লা জিউন রহ: ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র। তার একটি বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে ছিল কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে তাকে পাত্রস্থ করা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে তিনি তার পুরনো শিষ্য বাদশাহ আলমগীরের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করেন। বাদশাহ দেখলেন রাজ কোষাগারের অর্থ সন্দেহজনক, তাই তিনি তা থেকে এক কপর্দকও গ্রহণ করতেন না। সেখান থেকে কি করে নিজ পীরকে কোষাগার থেকে অর্থ সাহায্য করবেন। নানা রূপ চিন্তাভাবনার পর শেষ পর্যন্ত নিজ পরিশ্রমলব্ধ চার আনা পয়সা স্বীয় ওস্তাদের হাতে দিলেন। মেয়ের বিয়ের খরচের তুলনায় চার আনা পয়সা একেবারেই হাস্যকর বৈ কিছু নয়। এতে মোল্লা জিউনের মন দমে গেলেও এক সময়ের প্রিয় শিষ্যের দান গ্রহণ না করে পারলেন না। এই চার আনা পয়সা নিয়ে গৃহ অভিমুখে রওনা হলেন। পথে মনে মনে চিন্তা করলেন, এ চার আনা পয়সা দিয়ে কি করবেন, শিষ্য এত বড় রাজ্যের অধিপতি, তার কাছে এসেছিলাম কন্যার বিবাহ দেয়ার একটা উপায় করে দিবে কিন্তু তা হলো না। যা হোক, আল্লাহ পাক ভাগ্যে যা লিখেছেন, তাই হবে। এ কথা ভাবতে ভাবতে পথ চলতে লাগলেন।
কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর তিনি দেখতে পেলেন রাস্তার পাশে একটি লোক একটি বিরাট মাছ বিক্রয় করার জন্য বসে আছেন। বেলা শেষ খরিদ্দার না পেয়ে লোকটি মনস্থ করল- কোনো লোক মাছের যে মূল্যই বলে তাতেই সে তা বিক্রি করে দেবে। এ দিকে মোল্লা জিউন তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করতেই মাছওয়ালা তাকে মাছ কিনে নিতে আহ্বান জানাল। তিনি বললেন, তোমার কাছ থেকে মাছ খরিদ করার মূল্য আমার কাছে নেই। মাছওয়ালা বলল, আরে আপনার কাছে যা আছে তাই দিন। মোল্লা জিউন রহ: তার কাছে যে চার আনা পয়সা তা দিয়ে অনেক বেশি দামের মাছটি খরিদ করে গৃহে পৌঁছে বিবিকে রান্না করতে বললেন। বিবি মাছটি কাটতে গিয়ে এর পেটের মধ্যে কতগুলো মুক্তার দানা দেখতে পেলেন, ওইগুলো চকমক করছিল। তিনি এতে বিস্ময়বোধ করে স্বীয় স্বামীকে ডেকে দেখালেন। তিনিও তা দেখে অবাক হয়ে গেলেন।
এগুলো কি জিনিস তা পরীক্ষা করার জন্য মোল্লা জিউন রহ: একটি দানা সাথে করে নিকটস্থ বাজারে এক জহুরির দোকানে গিয়ে জহুরিকে দানাটি দেখালেন। জহুরি তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখলেন, সত্যই এটি অতি মূল্যবান মুক্তা। সে বলল, আপনি যদি এটি বিক্রি করেন তবে আমি একশত দিনার মূল্যে কিনতে পারি। তিনি তাতেই রাজি হলেন এবং ওই দিনারগুলো দিয়ে পরম স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে কন্যার বিবাহ কার্য সমাধা কররেন। তারপর বাকি মুক্তার দানাগুলো নিয়ে শিষ্য বাদশাহ আলমগীরের দরবারে গিয়ে দানাগুলো তার হাতে দিয়ে ঘটনা আদ্যপান্ত বর্ণনা করলেন।
বাদশাহ এতদশ্রবণে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলেন আর বললেন উস্তাদজী! এ মুক্তাগুলো আপনি আমার হাতে দিলেন কেন? এগুলোর মালিক তো আপনি, এতে আমার কোনো অধিকার নেই। তবে এরূপ হওয়ার কারণ বলতে পারেন? আমার তো মনে হয় ‘হালাল মালের বরকত।’
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, মাত্র চার আনা পয়সা আমি আপনাকে কেন দিলাম? অথচ রাজকোষাগার থেকে যথোপযুক্ত অর্থ দিলাম না কেন? হুজুর যে কোষাগারের অর্থ আমি নিজে গ্রহণ করি না, তাই আপনি আমার উস্তাদ হিসেবে আপনার জন্যও তা গ্রহণ করা আমি পছন্দ করিনি। উল্লেখ্য ঘটনাটি বাদশাহ আলমগীরের আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতারই জ্বলন্ত প্রমাণ।
লেখক
মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান
শিক্ষক
জামিয়া কোরানিয়া সৈয়দা সৈয়দুন্নেছা ও কারিগরি শিক্ষালয়, কাজীপাড়া,ব্রাক্ষণবাড়ীয়া।