কলাম ডেস্ক:
নির্যাতন একটি পৈশাচারিক অত্যাচার। নির্যাতন হচ্ছে সমাজের একটি কলঙ্কিত নাম যা কিছু দুশ্চরিত্রের অধিকারী মানুষেরা প্রতিনিয়ত এটি করে যাচ্ছে। নির্যাতন করা তাদের প্রতিদিনকার রুটিন হয়ে গিয়েছে যা তারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে। প্রতিদিন কোন না কোন জায়গায় শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যায়ের নারী ও পুরুষ বিনা কারণে নির্যাতিত হচ্ছে। সমাজের নিম্নস্তরের মানুষ যাদেরকে অসহায় ও দারিদ্র বলে বিবেচিত করা হয় তারাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বিনা কারণে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে। বিশেষ করে নারীরা বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। সমাজে মুখ দেখানোর কোন রাস্তা খুঁজে না পেয়ে আত্মহত্যাকে সঠিক রাস্তা হিসেবে বেঁছে নিচ্ছে। ফলে এর কোন সঠিক প্রতিবাদ হচ্ছে না, হলেও সর্বোচ্চ কয়েকদিন বা কয়েক মাস তারপর আবার সব নিস্তব্ধ হয়ে যায়। নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হলে এদেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। নারীর অধিকার আদায় করতে হবে। আর যদি এসব না হয় তাহলে একদিন এ সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে শিশু নির্যাতন বেশি প্রচলিত হয়ে উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শিশুর প্রতি চার ধরণের আচরণকে ভাগ করেছেন।
শারীরিক নির্যাতনঃ
প্রত্যেকটি শিশুর জীবনে শারীরিক নির্যাতনের কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
প্রতিদিন কোন না কোন জায়গায় শিশুরা শারীরিক নির্যাতনের কবলে পড়ছে। এর থেকে কোন রেহাই পাচ্ছে না। শিশুর ইচ্ছার সম্মতি না হয়ে তার উপরে শারীরিক অত্যাচার করা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে শরীরে মারাত্মক আঘাত করা বা কোন খারাপ কাজ যা শিশুকে মৃত্যুর মুখে ডেকে আনতে পারে এমন কোন কাজকে নির্যাতন হিসেবে গণ্য করা হয়। শারীরিক নির্যাতন এবং শারীরিক শাস্তি এই দুটোর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই বল্লেই চলে। শারীরিক শাস্তি একটি শিশুকে অস্বস্তিকরভাবে থাকতে বাধ্য করে। শারীরিক নির্যাতন বেশিরভাগ সময়ই বাসা বাড়িতে কাজ করা ছোট মেয়েদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। মালিকদের অমানবিক অত্যাচারের কবলে পড়ে তারা একেবারেই নিঃস্ব হয়ে যায়। ফলে কোন উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু অবশেষে সেটিও করতে ব্যর্থ হয়। তখন তাদের উপর অত্যাচারের মাত্রা আরও দিগুণ বেড়ে যায়। একসময় মৃত্যুকে বাঁচার সহজ পথ হিসেবে বেছে নেয়। এই হচ্ছে আমাদের সুশীল সমাজ যেখানে নির্যাতনকরীদের কোন শাস্তি নেই। শাস্তি তারাই পাচ্ছে যারা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে।
যৌন নির্যাতনঃ
যৌন নির্যাতন সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটছে পারিবারিক কারণেই। শিশুরা যেমন বাড়ির বাহিরে নিরাপদ নয় তেমনি তারা ঘরের ভিতরও নিরাপদ নয়। বাড়ির অন্যান্য সদস্য বা আত্মীয় অথবা প্রতিবেশীর দারা শিশুরা প্রতিনিয়ত যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কারণ আমাদের সমাজের মানুষেরা মানুষরূপী পশু হয়ে গিয়েছে। তাদের বিবেক বুদ্ধি একেবারেই নেই বল্লেই চলে। এমনকি তারা নিজের মেয়েকে পর্যন্ত যৌন নির্যাতন করেছে। শিশুর সাথে শারীরিক বিষয়ে কথা বলা, অশ্লীল ছবি দেখানো কিংবা তাদের শরীরে অথবা আপত্তিকর (গপোনাঙ্গে) জায়গায় স্পর্শ করাকেও যৌন নির্যাতন বলা হয়। শুধু যে মেয়ে শিশু যৌন নির্যাতন হচ্ছে তা নয় বরং তাদের সাথে ছেলে শিশুও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কারণে যৌন নির্যাতিত হচ্ছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১২ বছরের কিশোরীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছে। বয়সের তুলনায় অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে না পারার কারণে কিশোরীদের মৃত্যুও হচ্ছে।
মানসিক নির্যাতনঃ
প্রকৃত অর্থে ইচ্ছাকৃত বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে শিশুর পিতা-মাতা বা অন্য ব্যক্তির দারা যদি শিশুকে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করা বা ক্ষতি করার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয় তাকে মানসিক নির্যাতন বলে। শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে তাকে যে ধরণের আচরণমুলক ব্যাবহার করা হয় যেমন জোরে জোরে চিৎকার করে কথা বলা, খারাপ মেজাজ দেখানো, নাম বিকৃত করা, শিশুকে অমনোযোগি করা এবং শিশুর চরিত্রের উপর দোষ দেওয়া ইত্যাদি মানসিক নির্যাতনের উপর গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাব ফেলতে থাকে। ফলে মানসিক নির্যাতনের কবলে পরা শিশুটি নির্যাতনকারীর কাছ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে এবং নিজের নামের বিকৃত হওয়া শব্দগুলোকে মনের মধ্যে ধারণ করে ফেলে। মানসিক নির্যাতনের কারণে শিশুরা অস্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে শুরু করে এবং এর প্রতিবাদ না করার মানসিকতা গড়তে শিখে ফেলে। ফলে তারা নিজেদের একা ভাবে এবং কোন প্রকার বন্ধু যোগায় না। এতে যেমন শিশুর ক্ষতি হচ্ছে তেমনি এই সমাজও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
অবহেলা জনিত নির্যাতনঃ
অবহেলা নির্যাতনের অন্যতম একটি কারণ। অবহেলার কারণে প্রতিনিয়ত কত কিছুই না ঘটে থাকে। অবহেলা জনিত নির্যাতন সাধারণত পারিবারিক সূত্রে সংগঠিত হয়। পরিবারের প্রধান কর্তার শিশুর প্রতি অমানবিক অত্যাচার এবং অবহেলার কারণে নির্যাতনের প্রভাব দিন দিন আরও বেড়ে উঠছে। একটি শিশু বেঁড়ে উঠার সাথে সাথে তাঁর বিনোদনের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় খেলনা সামগ্রী দরকার হয় যা হয়ত একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে কোন খেলনা সামগ্রী ছাড়াই শিশুটি একরকম মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়ে বেঁড়ে উঠছে। অবহেলার কারণে শিশুটি বেঁড়ে উঠার পর বিভিন্ন ধরণের সামাজিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকে। তাদের মানসিক ভাবনা ও আচার-আচরণগুলো বাবা-মায়ের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যায়। একটি শিশু অবহেলার শিকার হয়ে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরে। ফলে কারো সাথে কথা বলা বা বন্ধুত্ব তৈরি করা কোনভাবেই সেই শিশুটির পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। বড় হয়েও শিশুদের মতো আচরণ করতে থাকে। পরিবার ও সমাজের অজান্তে তারা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হয়েই যাচ্ছে।
আসুন আমরা সকলে মিলে এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংঘ গড়ে তুলি। নির্যাতনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হউক মৃত্যুদণ্ড এই স্লোগান নিয়ে সকলকে মাঠে নামতে হবে। এ দাবি পূরণের জন্য জনগণকে সাহসী ও শক্তিশালী হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আর একমাত্র জনগণই পারে এ দাবি পূরণ করতে। কারণ জনগণই সরকার, সরকারই জনগণ। তাহলে হয়ত আমাদের এই অশান্তিপূর্ণ সমাজটা একদিন একটি শান্তিপূর্ণ ও নির্যাতন মুক্ত সমাজ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে ইনশাল্লাহ।
লেখকঃ
নাসিফ জাবেদ নীলয়
শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি