Advertisement

কুরবানি আল্লাহর সাথে বান্দাহর ভালবাসা নিদর্শন।

NewsBrahmanbaria

এই আর্টিকেল টি ৯৯৮।
এনবি ডেস্ক:

কুরবানি শব্দটি মূলত আরবি কুরবান শব্দ থেকে এসেছে।কুরবান বলা হয় যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম হয়।তবে সাধারণত শব্দটি প্রাণী জবাই করার অর্থে ব্যবহৃত হয়।

♦কুরবানির সূচনা –
হজরত ইব্রাহীম (আ:)স্বপ্নে দেখেন, হে ইব্রাহীম তুমি কুরবানি কর। ঘুম থেকে উঠে তিনি একশত উট আল্লাহর রাহে কুরবানি করেন। দ্বিতীয় রাতে পুনরায় স্বপ্নে দেখেন হে ইব্রাহীম কুরবানি কর। সকালবেলা তিনি একশত উট পুনরায় কুরবানি করেন। তৃতীয়রাতে স্বপনে দেখেন আল্লাহতায়ালা বলছেন হে ইব্রাহীম কুরবানি কর। ইব্রাহীম (আ:)বললেন,হে আল্লাহ কি কুরবানি করব?আল্লাহতায়ালা বললেন, তোমার প্রিয় বস্তু কুরবানি কর। ইব্রাহীম (আ:) এর সবচেয়ে প্রিয়বস্তু ছিল ছেলে ইসমাইল (আ:)।


আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়িত করতে ইব্রাহীম (আ:)পুত্র ইসমাইল (আ:)কে কুরবানি করতে মিনায় কুরবানি স্থলে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে পুত্র ইসমাইলকে পিতা ইব্রাহীম বলছেন, হে বৎস, আমি স্বপ্নে আদিষ্ট হয়েছি তোমাকে কুরবানি (জবেহ) করছি, এ বিষয়ে তোমার মতামত কি? উত্তরে পুত্র ইসমাইল বলল হে আমার পিতা, আপনি যে আদেশ পেয়েছেন তা বাস্তবায়ন করুণ, আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন ইনশাআল্লাহ। পুত্রকে শায়িত করে যখন ছুরি চালালেন ছুরি কাজ করলনা।

এ সময় আল্লাহ তায়ালা ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন, হে ইব্রাহীম, তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যরুপে প্রমাণ করে দেখিয়েছ। এখন ইসমাইলের পরিবর্তে এই দুম্বাটি কুরবানি করে ফেল।সেই থেকে আজ অবধি মুসলিম জাতী সেই প্রতিকী কুরবানি দিয়ে আসছে। আল্লাহর কাছে ইব্রাহীম (আ:)এর কুরবানি এতো ই পছন্দ হয়েছে যে এই নিদর্শন কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম মিল্লাতের জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে কুরবানির অসংখ্য ফযিলত রয়েছে।
বিশিষ্ট সাহাবী হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম(রা:)বলেন,সাহাবীগণ রাসুল (সা:)কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা:)কুরবানি কি? উত্তরে রাসুল (সা:)বললেন, এটা তোমাদের পিতা হজরত ইব্রাহীম (আ:)এর সুন্নাত। সাহাবীগণ বললেন, এতে আমাদের লাভ কি? রাসুল(সা:)বললেন, কুরবানিকৃত পশুর প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে নেকী প্রাপ্ত হবে।(সুনানে ইবনে মাযাহ)।

রাসুল(সা:)বলেন, কুরবানির পশু পুলসিরাতের উপর তোমাদের জন্য বাহন হবে।তাই তোমরা সুস্থ,সবল, মোটা তাজা পশু কুরবানি কর।

♦যাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব –
প্রত্যেক জ্ঞানসম্পন্ন, বালেগ,মুকিম মুসলমান যে নেসাবপরিমান সম্পদের মালিক তার উপর কুরবানি ওয়াজিব। নেসাব দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, জীবনধারণে অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনাদীর অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা তার মূল্য পরিমাণ সম্পদ কারো কাছে বিদ্যমান থাকা। চাই এই সম্পদ সোনা-রুপা, অলংকারাদী,ব্যবসার পণ্য, বসবাসের অতিরিক্ত বাড়ী-ঘর ইত্যাদি যাই হোক।
( ফতোয়ায়ে শামী)।


কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য সম্পদ যাকাতের মতো একবছর পর্যন্ত স্থায়ী হওয়া শর্ত নয়।

♦যেসকল পশু দিয়ে কুরবানি করা যায়-
(১)উট (২)গরু (৩)মহিষ (৪)দুম্বা (৫) ভেড়া (৬)ছাগল দিয়ে কুরবানি করা যায়।ত্রুটিপূর্ণ পশু দিয়ে কুরবানি করলে কুরবানি বৈধ হবে না।
হজরত আয়েশা(রা:)থেকে বর্ণিত, রাসুল(সা:)এরশাদ করেন, কুরবানির দিন বনি আদমের জন্য রক্ত প্রবাহ করা তথা কুরবানি করার চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় অন্যকোন আমল নেই।নিশ্চয় কুরবানিকৃত পশু স্বীয় শিং, চুল ও খুরসহ আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। নিঃসন্দেহে কুরবানির জন্য জবাইকৃত পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বে ই আল্লাহর দরবারে কুরবানি কবুল হয়ে যায়।অতএব এই বিরাট সওয়াবের দিকে লক্ষ্য রেখে তোমরা আনন্দের সাথে কুরবানি কর।(তিরমিযী শরিফ)।

কুরবানি ইসলামের অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ এবাদত। এই এবাদত একমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের আশায় করা উচিৎ। পশু কুরবানির পাশাপাশি মানুষ যেন তার মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা পশুত্বকে কুরবানি করে আল্লাহ ও রাসুল(সা:)এর বিধিবিধান নিজেদের বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন ঘটাতে পারে সে জন্য ই আল্লাহতায়ালা কুরবানির মতো এক গুরুত্বপূর্ণ এবাদত মুসলিম জাতীকে দান করেছেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কুরবানি করার তাওফিক দান করুণ, আমিন।

লেখক :

মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান
যুগ্ম সম্পাদক
ইসলামী ঐক্যজোট
ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলা।

 

Advertisement

Sorry, no post hare.

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com