স্টাফ রিপোর্টার:
অযত্ন, অবহেলা আর সংস্কারের অভাবে সৌন্দর্য্য হারানো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের জমিদার কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরীর বাড়িটির সংস্কার কাজ চলছে। স্থানীয়রা এটিকে রাজবাড়ি হিসেবেই চেনে। সরকারের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের আকিলজিষ্টরা প্রায় এক বছর ধরেই জমিদার বাড়িটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সংস্কার কাজ করছেন। নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামে অবস্থিত এই বাড়িটি। বাড়ির সামনে রাস্তা ও পিছনে তিতাস নদী।
এলাকাবাসী ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, ১৮৭০ সালে জমিদার কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী ৪৮০ শতাংশ জমির উপর (প্রায় ৫ একর) তিনতলা বিশিষ্ট এই মনোমুগ্ধকর বাড়িটি নির্মান করেন। বাড়িটি নির্মানের পর জমিদার কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী তার পরিবার পরিজন নিয়ে এই বাড়িতে বসবাস করতেন।
পরে বংশ পরস্পরায় গৌর প্রসাদ রায় চৌধুরী, হরেন্দ্র লাল চৌধুরী, হরিপদ রায় চৌধুরীও তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে এই বাড়িতে বসবাস করতেন। তিনতলা বিশিষ্ট বাড়িটিতে রং মহল, দরবার হল, নাচ ঘর, মন্দিরসহ ৬০টি কক্ষ রয়েছে। বাড়ির ভেতরে রয়েছে খেলার মাঠ ও পুকুর। বিশাল আয়তনের বাড়িটির পুরো ভবন লাল ইট, সুরকির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি।
ভবনের দুপাশে দুটি সুউচ্চ গম্বুজ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করছে জমিদার বংশের ঐতিহ্যের কথা। বাড়িটির একেকটি ভিম দুই থেকে আড়াই ফুট চওড়া। উপরে উঠার জন্য রয়েছে ৪দিক থেকে সিঁড়ি। বাড়ির দক্ষিণে পাকা ঘাটলা। ঘাটলা ঘেষে তিতাস নদী। ঘাটলার দিক দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ পথ। অনেক বড় বারান্দা ডিঙ্গিয়ে মূল বাড়ি।
বাড়িটিতে গেলে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই চোখে পড়বে কারুকাজ খচিত দেয়াল। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে জমিদারের উত্তরাধিকারি হরিপদ রায় চৌধুরী বাড়িটি ফেলে কলকাতায় চলে যান। যাওয়ার সময় বাড়িটিতে রেখে যান পুরোহিতদের। বংশ পরস্পরায় পুরোহিতরাই বর্তমানে বাড়িতে বসবাস করছেন।
১৯৪৭ সালে জমিদারের উত্তরাধিকারি হরিপদ রায় চৌধুরী বাড়িটি ফেলে কলকাতায় চলে যাওয়ার পর যথাযথ রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কারের অভাবে বাড়িটি ধ্বসের মুখে পড়ে। বাড়িটির বিভিন্ন স্থানের প্লাষ্টার খসে পরে ও লোহার পাটাতন গুলো ক্ষয় হতে থাকে। ভবনের মূল্যবান দরজা জানালা চুরি হয়ে যায়।
এমতাবস্থায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রয়াত মন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাড়িটির ঐতিহাসিক নিদর্শন বিবেচনা করে ২০১৬ সালে সরকারের প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটিকে সংরক্ষিত পুরার্কীতি” হিসেবে ঘোষনা করেন। প্রতিদিন দেশ ও বিদেশের প্রচুর লোক আসে নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীতে তিতাস নদীর তীরে নির্মিত পুরনো জমিদার বাড়িটিকে একনজর দেখতে। বিশেষ করে বর্ষার মৌসুমে পিকনিক পার্টির আগমনে বাড়িটি থাকে উৎসব মুখর। প্রয়াত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ঘেটুপুত্র কমলা ও মধুমালতীসহ অসংখ্য ছবির শুটিং এখানেই হয়েছে। বাড়িটির সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার পর গত ২০ সেপ্টেম্বর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ডঃ মোঃ আবু হেনা মোস্তফা রাজবাড়িটি পরিদর্শন করেন।
সরজমিনে গেলে বাড়ির পুরোহিত সন্তোষ চক্রবর্তী জানান, বংশানুক্রমে ৭০ বছর ধরে তারা জরাজীর্ণ এই জমিদার বাড়িতে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বাড়িটি সরকারে তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তিনি জানান, প্রায় ১ বছর ধরে বাড়িটির সংস্কার কাজ চলছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাড়িটির সামনের অংশের কাজ করে বর্তমানে ভেতরে একটি কক্ষের কাজ চলছে।
শ্রমিকদের প্রধান অজিত সরকার জানান, প্রতœতত্ত্ব বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার সংস্কার কাজের বিষয়ে পুরো বলতে পারবেন। তিনি বলেন, প্রায় এক বছর ধরে রাজবাড়ির সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ করছি। প্রতœতত্ত্ব বিভাগ বাড়িটিকে পর্যটন ভিত্তিক করে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে।
এ ব্যাপারে হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আাঁখি জানান, শুনেছি প্রতœতত্ত্ব বিভাগ বাড়িটির সংস্কার কাজ করছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ডঃ মোঃ আবু হেনা মোস্তফা বাড়িটির সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা আশরাফী বলেন, বর্তমানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ বাড়িটিকে প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরে অর্ন্তভুক্ত করে সংরক্ষণ এবং সংস্কারের কাজ করছে।