নিউজ ডেস্ক,
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে প্রেমের বিয়েকে কেন্দ্র করে দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে সিদ্দিক মোল্লা (৮০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। সোমবার গভীর রাতে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত সিদ্দিক মোল্লা সোনাতলা গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে।
এ ঘটনায় আবদুন নূর-(৫০) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুল কাদের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০জন আহত হন। আহতদের মধ্যে সাব্বির মিয়া, রহিম মিয়া, মিজান মিয়া, সবুজ মিয়া, অবিদ মিয়া,খলিল মিয়া, জামাল মিয়া, সাহাজুল মিয়া, মামুন মিয়া, তফাজ্জল মিয়া, নায়েম মিয়া, নাজমুল মিয়া, তালিম মিয়া, শারমীন বেগম ও রাফিয়া বেগম, আক্কল আলী, সাইফুল ও সফিক মিয়া স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, গোয়ালনগর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও সোনাতলা গ্রামের বাসিন্দা সালাম মিয়ার কন্যা শাহিনুর বেগমের সাথে একই গ্রামের সাইফুল মিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। গত বছরের ৭ মে শাহিনুর ও সাইফুল বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু শাহিনুরের পিতা সালাম মিয়া এই বিয়ে মেনে নেয়নি। বিয়ের কয়েকমাস পর পরিবারের চাপে সাইফুলকে ডিভোর্স দেয় শাহিনুর।
গত ২৫ অক্টোবর রাতের বেলা সালাম মিয়া গ্রামের একটি শালিস শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে তাকে মারধোর করে সাইফুল ও তার পক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় গত ২৬ অক্টোবর সালাম মিয়া নাসিরনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। গত সোমবার রাত ২টার দিকে মামলার আসামীদেরকে গ্রেপ্তার করতে যায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে টের পেয়ে দুইপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে সাইফুলের দাদা বৃদ্ধ সিদ্দিক মোল্লাসহ উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর সংবাদ সাইফুলের বাড়িতে পৌঁছার পর সালাম মিয়ার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট করে সাইফুলের পক্ষের লোকজন।
এ ব্যাপারে সাইফুল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি প্রেম করে সালাম মিয়ার কন্যা শাহিনুরকে বিয়ে করি। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর সালাম মিয়া শাহিনুরকে জোর করে আমায় ডিভোর্স দিতে বাধ্য করে। পরে আমাদের বিরুদ্ধে সালাম মিয়া থানায় একটি মিথ্যা মামলা করে। এই মামলার আসামী হিসেবে আমাদের ধরতে আসে পুলিশ। পুলিশের সামনেই সালাম মিয়ার লোকেরা আমার দাদাকে পিটিয়ে হত্যা করে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় মেম্বার ও শাহিনুরের পিতা সালাম মিয়া বলেন, সাইফুল ও তার পরিবারের লোকজন ইয়াবা ব্যবসায়ী। ইয়াবা ব্যবসার প্রতিবাদ করায় সাইফুল আমার কন্যাকে জোর করে নিয়ে বিয়ে করে। আমাকেও মারধর করেছে। মারধোরের ঘটনায় থানায় মামলা করি। রাতে আসামি ধরতে আসে পুলিশ। সে সময় পালাতে গিয়ে আহত হয় সিদ্দিক মোল্লা। নৌকা দিয়ে নাসিরনগর আনার সময় তারা নিজেরা গলা টিপে তাকে হত্যা করে।
এ ব্যাপারে নাসিরনগর থানার চাতলপাড় পুলিশ ফাঁড়ির এস.আই জাকির হোসেন বলেন, সোনাতলা গ্রামটি চরের মধ্যে। সোমবার রাতে সালাম মিয়ার দায়ের করা একটি মামলার আসামীদের আমরা ধরতে যাই। সেখানে যাওয়ার পর উভয়পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়ায়। প্রায় দুই ঘন্টা চলে তাদের সংঘর্ষ। সংঘর্ষে সাইফুলের দাদা সিদ্দিক মোল্লা আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে আবদুর নূর-(৫০) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এ ব্যাপারে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে পূর্ব শত্রুতা দীর্ঘদিনের। সোমবার রাতে তাদের মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত হয়ে বৃদ্ধ সিদ্দিক মোল্লা মারা যান। আমরা তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছি। এ ঘটনায় আমরা একজনকে গ্রেপ্তার করেছি।