নিউজ ডেস্ক,
পেশায় রাজ মিস্ত্রি হয়েও অদম্য ইচ্ছার বলে প্রত্যন্ত গ্রামে সাহিত্য চর্চা করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লেখক মো: জমির হোসেন পারভেজ। অভাবের সংসারে যেখানে পেট চালানো দায়, তখনও থেমে নেই সাহিত্য চর্চা। এভাবে কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্যে তিনি লিখেছেন কাব্যগ্রন্ত্র, গল্প, উপন্যাশ, প্রবন্ধন সম্পদনা সহ লিখেছেন ১৪টি বই।
তার লেখা নাটক স্থানীয়ভাবে সঞ্চায়িত হয়েছে প্রায় ৩০টির উপরে। বইগুলো হলো প্রিয়ার মুখটি চোখে ভাসে, হতাশার প্লাটফর্ম, প্রিয়ার বুকে উড়না, প্রসূতির কান্না, বজ্র কন্ঠের হুংকার, চৈত্রের আকাশ আগুনে পুড়ে, ৭১ রক্তক্ষরণ, সে একটি হৃদয়ের প্রত্যাশা, অদভূদদ্বয়ের ডাক। সম্পদনা করেছেন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, রাসেল একটি গল্পের নাম নয়, একটি স্বপ্নের আমৃত্যু, ছোটদের মুক্তিযুদ্ধে ৭১ গল্প, ছোটদের শেখ হাসিনা। এই বই প্রকাশনা করেছেন আঞ্জুমান পাবলিকেশন, সত্য কথা প্রকাশনী, তানিয়া বুক ডিপো, ইমন প্রকাশনী।
জমির হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট ইউনিয়নের সেমন্তঘর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে জমির তৃতীয়। স্কুল জীবন থেকেই তার কবিতা লেখা শুরু। এরপর তিনি একের পর এক লিখে যাচ্ছেন। অভাব অনটনের কারণে এসএসসি পাশ করার পর আর লেখা পড়া চালিয়ে যেতে পারেন নি। প্রায় দশ বছর লেখাপড়া বন্ধের পর আবার বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ের মাধ্যমে এইচ এস সি ও ডিগ্রী পাশ করেন। অর্থ ও পরিবারের চাপ থাকলেও তিনি থেমে যান নি। লড়াকু সৈনিকের মত অর্থের পিষাঘাষ্টে তিনি সাহিত্য চর্চা করছেন।
তিনি বলেন, আমার জীবন চলার পথ স্বাভাবিক ছিল না। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আমাকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আমার প্রথম উপন্যাশ ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়। প্রিয়ার মুখে চোখে বাসে। এই সময় আমার কাছে এক টাকাও ছিল না। তখন আমার বাবাকে বলেছিলাম আমার টাকা লাগবে। তখন বাবা কিছু না বুঝিয়ে তিন হাজার টাকা সুদ এনে আমাকে দিয়েছিলেন। সে টাকা দিয়ে বইটা প্রকাশ করি। দ্বিতীয় পর্যায়ে যে আমার বই প্রকাশ হয়েছিল হতাশার প্লাটফর্ম। তখনও আমার কাছে টাকা ছিল না। তখন আমার বিয়ের আংটি ও স্ত্রীর মাটির ব্যাংকের জমানো টাকা দিয়ে কাব্যগ্রন্থ বইটি বের করি। পরবর্তীতে প্রত্যোকটি বই বের করতে গিয়ে আমার বন্ধুমহল শুভাকাঙ্খীরা আমাকে সহযোগীতা করে। একজন রাজমিস্তি হয়েও সংসার চালিয়ে অভাবের দুর্গম পাহাড়ে পড়ে বেঁচে থাকার যে কষ্ট একমাত্র রাজমিস্ত্রী বলতে পারে। তারপরও আমার সাহিত্যকে ছেড়ে দূরে সরে যায় নি। না খেয়েও আমি সাহিত্য সাধনা করে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমি পর্যন্ত নয়টি মত কাব্যগ্রন্ত্র, গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাশ লিখেছি। সম্পদনা করেছি পাঁচটির মত বই। স্থানীয়ভাবে আমার নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে প্রায় ৩০টির উপরে। আরো ১২টির মত বই লেখার কাজ চলছে। বই প্রকাশিত হওয়ার ব্যাপারে সরকারিভাবে যদি আমাকে সহায়তা করে তাহলে আমি আরো বই লিখতে পারব। এছাড়া আমার লাইব্রেরীটিকে যদি সরকার বই দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেয় তাহলে সাহিত্য সাধনা করে জাতীয় পর্যায়ে যেতে পারব। জমির হোসেন পারভেজেন স্ত্রী সালমা সুলতানা বলেন, আমার বিয়ের সময় শুনেছি তিনি স্কুল জীবন থেকে কবিতা লিখা শুরু করেন। বিয়ের পর তার লেখা একটি বই বের করতে গিয়ে বিয়েতে উপহার পাওয়া স্বর্ণের আংটি বিক্রি করে বইটি বের করেছিল। অভাব অনটনে সংসার চললেও আমার স্বামীকে আমি সাহিত্য চর্চায় সহযোগীতা করে যাচ্ছি।
স্থানীয়রা বলেন, মো: জমির হোসেন পারভেজ একজন লড়াকু সৈনিক। প্রাথমিক জীবনের শুরু থেকে সংগ্রাম করে আর্থিক কষাঘাতে তার জীবনটা বড় হয়েছে। স্কুল জীবন থেকে লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে বাবার সাথে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। মাধ্যমিক পড়াশোনা সময়ে তিনি লেখালেখি শুরু হয়। পর্যায় ক্রমে তার লেখালেখি যখন ছড়িয়ে পড়ে আর্থিক সংকটের কারনে লেখালেখি বন্ধ হওয়ার পথে ছিল। পরে প্রবাসী ও গ্রামের লোকজনের সহায়তায় বই বের হওয়ার পেছনে তাকে সহায়তা করে। কর্ম করেও তিনি সাহিত্য সাধনা করছেন নিয়মিত। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুনী এই ব্যক্তিকে এগিয়ে নিলে দেশের সাহিত্য চর্চা আরো সমৃদ্ধ হবে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো: শাহগীর আলম বলেন, জমির হোসেন পারভেজ একজন দিনমজুর রাজমিস্ত্রী হয়ে সাহিত্য চর্চা, গান ও নাটক লিখেন। জানতে পেরেছি তার এলাকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষানুরাগী করার জন্য লাইব্রেরী স্থাপন করতে চাচ্ছেন। শিক্ষা সংঙ্কৃতির সাথে জড়িত বিষয়গুলি উৎসাহিত করে আসছি। তিনি যদি আমার সাথে যোগাযোগ করেন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহায়তা করা হবে।