স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের লইস্কার বিলে গত ২৭ আগষ্ট (শুক্রবার) যাত্রীবাহি নৌকা ডুবিরর ঘটনার পর পরবর্তী নিরাপদ নৌ-যান চলাচলের বিষয়ে পাঁচদফা মতামত এবং ৭ দফা সুপারিশসহ মোট ১২ দফা মতামত ও সুপারিশ করেছে আশুগঞ্জ-ভৈরব নদী-বন্দরের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লি¬উটিএ কর্তৃপক্ষ।
গত ২৯ আগষ্ট আশুগঞ্জ-ভৈরব নদীবন্দরের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লি¬উটিএ’র উপ-পরিচালক মোঃ শহীদ উল্যাহ নৌকা ডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসন গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) মোঃ রুহুল আমীনের কাছে লিখিতভাবে এই সুপারিশ করেন।
৫ দফা মতামতে বলা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আনন্দ বাজার থেকে বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর নৌ-পথটি বিআইডব্লি¬উটিএ কর্তৃক সংরক্ষিত নৌ-পথ নয়। সংরক্ষিত নৌ-পথ হতে হলে বছরের সব সময় (শুষ্ক মৌসুম সহ) কমপক্ষে ১.৫ মিটার গভীরতা পানি থাকা বিদ্যমান নৌযান চলাচল করে। সেই সকল নৌ-পথ বিআইডব্লি¬উটিএ সংরক্ষণ করে। দুর্ঘটনা কবলিত আলোচ্য নৌ-পথটি হাওর অঞ্চলে অবস্থিত একটি খাল। শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে হাওর অঞ্চল প্ল¬াবিত হওয়ার প্রেক্ষিতে অস্থায়ীভাবে নৌ-পথটি জনসাধারন তাদের সল্প সময়ে ও কম খরচে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করে থাকে বিধায় উক্ত নৌপথটি সংরক্ষিত নয়।
দ্বিতীয়তঃ- এই নৌ-পথে যে সকল নৌকা চলাচল করে তাদের কোনটি নিবন্ধিত নয়। নিবন্ধিত হলে নৌকা বা ট্রলারের মালিকানা এবং রেজিষ্ট্রেশন নং দিয়ে নৌযানের নামকরণ করা যায়। এতে ট্রলারের দায়-দায়িত্ব থাকে এবং সরকারের নির্দেশনা সমূহ পালনে তারা বাধ্য থাকে।
তৃতীয়ত ঃ প্রতিটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ট্রলারকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে এবং দক্ষ চালক ও টেনিংপ্রাপ্ত সনদধারী চালকের মাধ্যমে পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহন করা যেতে পারে। এতে দূর্ঘটনা হ্রাস পাবে। প্রয়োজনে বিআইডব্লিউটিএর ট্রেনিং সেন্টার থেকে স্বল্প সময়ের কোর্স গ্রহন করা যেতে পারে।
চতুর্থতঃ- প্রতিটি ট্রলারে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারে নৌ অধ্যাদেশ অনুযায়ী জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম-লাইফ বয়া, জ্যাকেট অব্যশই রাখতে হবে।
পঞ্চমঃ- জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সব জায়গায় অদক্ষ চালক ও অনিবন্ধিত নৌযান চলাচল বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। এতে অনেকাংশে দুর্ঘটনারোধ হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। যা পর্যায়ক্রমে সারাদেশে বলবৎ করা যেতে পারে।
প্রতিবেদনে এ বিষয়ে ৭দফা সুপারিশে বলা হয়-
(ক) আনন্দ বাজার হতে বিভিন্ন নৌ-পথে নিরাপদ চলাচলের সুবিধার্থে প্রয়োজনে একতলা লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহনকরণ।
(খ) আনন্দ বাজার হতে কাউতলী ও শয়তানীয় ঘাট পর্যন্ত নৌ-যান চলাচলের সুবিধার্থেমার্কা স্থাপন ও প্রয়োজনীয় স্থানে হাইড্রোগ্রাফী সার্ভের মাধ্যমে ড্রেজিং কার্যক্রম গ্রহন।
(গ) অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাইরোধে ও অবৈধ নৌ-যান চলাচল বন্ধে বিআইডব্লি¬উটিএ হতে আনন্দবাজার ঘাটে একজন ট্রাফিক সুপারভাইজার পদায়ন।
(ঘ) আনন্দ বাজার হতে কাউতলী, আনন্দ বাজার হতে শয়তানীয় ঘাটে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন রোধে আনন্দ বাজার এলাকায় সুবিধাজনক স্থানে নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন।
(ঙ) সকল নৌ-যানকে আইনের আওতায় আনার সুবিধার্থে সকল নৌ-যানকে নিবন্ধনের আওতাভুক্ত করা এবং সার্ভে সনদপত্র প্রদানে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর হতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন।
(চ) রেজিষ্ট্রেশন ও সার্ভে সনদপত্র গ্রহন পরবর্তী বিআইডব্লি¬উটিএ হতে রুট পারমিট গ্রহনের মাধ্যমে নৌযান পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহন।
(ছ) আনন্দবাজার ঘাটে বিআইডব্লিউটিএ হতে একটি পল্টুন স্থাপন ও সরকারীভাবে ইজারা প্রদানের ব্যবস্থা করণ। ইহাতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইরাধে ইজারাদারেরও দায়-দায়িত্ব থাকবে।
এসব দাবি মানা হলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে বলে বিআইডব্লি¬উটিএর পক্ষ থেকে বলা হয়।