স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের হরতাল চলাকালে (২৮ মার্চ) শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের জাতীয় বীর আবদুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্ত মঞ্চে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাংচুরকারী মোঃ আরমান আলিফ-(২২) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৪-এর ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা।
গত রোববার রাতে সদর উপজেলার বিশ্বরোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে র্যাব সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কাজীপাড়ায় আরমান আলিফের ভাড়া বাসায় তল্লাশী চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গার কাজে ব্যবহৃত একটি শাবল, একটি বিদেশী পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন এবং ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৪-এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আবু নাঈম মোহাম্মদ তালাত এই তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারকৃত আরমান আলিফকে হাজির করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আরমান আলিফ জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের ফুলকারকান্দি গ্রামের শুক্কুর মিয়ার ছেলে। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কাজীপাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে।
সংবাদ সম্মেলনে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৪-এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আবু নাঈম মোহাম্মদ তালাত বলেন, গত ২৮ মার্চ দেশব্যাপী মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির অনুষ্ঠান চলাকালে হেফাজতে ইসলামের হরতাল চলাকালে দুপুর পৌন ১টার দিকে হামলাকারীরা বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি ভাংচুর করে। নিজেকে বাঁচাতে ঘটনার পরদিন চুল, দাঁড়ি কেটে ফেলে আরমান।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙ্গার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে আরমান আলিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সে ম্যুরাল ভাঙ্গার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। অন্যান্য আসামীদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ওই যুবক মাদরাসার ছাত্র কি না বা কোনো দলের সঙ্গে জড়িত কি না সেটা জানার চেষ্টা চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৪-এর ভৈরব ক্যাম্পের অধিনায়ক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিউদ্দীন মোহাম্মদ যোবায়েরসহ র্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তান্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, রেলওয়ে স্টেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, পৌর মেয়রের বাসভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, সার্কিট হাউজ, পৌরসভা কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয় ও ডাকবাংলো, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা ভবন, আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, মাতৃ সদন, এসিল্যান্ডের কার্যালয়, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কালীবাড়ি, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন, তার শ্বশুরের বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে।