স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামে আপন ভাই-বোন শিফা আক্তার-(১৪) ও মেহেদী হাসান কামরুল-(১০) হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
ভগ্নিপতি মোঃ কামাল হোসেন-(৪৬) এর দেয়া থাপ্পরের প্রতিশোধ নিতে নিহতদের মামা বাদল মিয়া-(৩০) মেহেদী হাসান কামরুল ও তার বড় বোন শিফা আক্তারকে জবাই করে খাটের নীচে লাশ লুকিয়ে রাখে।
ঘাতক বাদল মিয়া কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার খোদে দাউদপুর গ্রামের মরহুম আবদুর রবের ছেলে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ ঘাতক বাদল মিয়াকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইনের আদালতে সোপর্দ করলে বাদল মিয়া ভাগ্নি ও ভাগ্নেকে হত্যার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।
বিজ্ঞ আদালত বাদল মিয়াকে কারাগারে প্রেরনের নির্দেশ দেন। এর আগে পুলিশ গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকার সবুজবাগ থানা এলাকা থেকে বাদল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে গ্রেপ্তারকৃত বাদল মিয়া পুলিশের কাছেও ভাগ্নি শিফা আক্তার এবং ভাগ্নে মেহেদী হাসান কামরুলকে গলা কেটে খুন করার কথা স্বীকার করেছে।
বৃহস্পতিবার আদালত সূত্রে এবং গত বুধবার রাতে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ঘটনায় নিহতদের পিতা কামাল হোসেন বুধবার রাতে বাদল মিয়াকে আসামী করে বাঞ্চারামপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিহতদের পিতা, বাঞ্চারামপুর উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের মরহুম আবদুল আউয়ালের ছেলে মোঃ কামাল হোসেন গত ২৭ বছর ধরে সৌদি আরব প্রবাসী ছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি সৌদি আরব থেকে দেশে চলে আসেন। করোনাভাইরাস সংক্রমনের কারনে তিনি আর সৌদি আরব যেতে পারেননি।
কামাল হোসেনের শ্যালক বাদল মিয়া বাহরাইনে প্রবাসী ছিলেন। বাদল মিয়া বাহরাইনে থাকার সময় লড্রির দোকান দেয়ার জন্য ভগ্নিপতি কামাল হোসেনের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ১৩ লাখ টাকা হাওলাত নেয়। ইতিমধ্যেই বাদল মিয়া তার ভগ্নিপতিকে তিন লাখ টাকা পরিশোধও করে। চলতি বছরের মার্চ মাসে বাদল মিয়াও বাহরাইন থেকে দেশে চলে আসে। পরবর্তীতে করোনাভাইরাস সংক্রমনের জন্য তিনিও বাহরাইন যেতে পারেন নি।
এদিকে বাদল মিয়া তার গ্রামে ( কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার খোদে দাউদপুর গ্রাম) একটি গোষ্ঠীগত দাঙ্গার ঘটনায় মামলায় আসামি হওয়ার কারণে সম্প্রতি তার বড় বোন হাসিনা আক্তারের বাড়িতে ( ভগ্নিপতি কামাল হোসেনের বাড়িতে) আশ্রয় নেন।
বাদল মিয়ার কাছে পাওনা ১০ লাখ টাকার জন্য বাদল মিয়ার সাথে ভগ্নিপতি কামাল হোসেনের মনোমালিন্য চলছিল। এর জেরে সপ্তাহখানেক আগে বাদলকে থাপ্পড় মারেন কামাল হোসেন। এ ঘটনার প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন বাদল মিয়া।
গত ২৪ আগস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে কামাল হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান কামরুল তার মামা বাদল মিয়ার রুমে যায়। বাদল তখন রুমে উচ্চস্বরে গান বাজাচ্ছিলেন।
এক পর্যায়ে বাদল ভাগ্নে কামরুলে দুই হাত বেঁধে ফেলে ও পরে তার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে কামরুলকে জবাই করে লাশ চাদর দিয়ে পেচিয়ে ঘরে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে।
এদিকে মাগরিব নামাজের আযানের পরেও ছেলে কামরুল ঘরে না ফেরায় কামাল হোসেন তার স্ত্রী হাসিনা বেগম কন্যা শিফা আক্তারকে ঘরে রেখে কামরুলকে খুঁজতে বাড়ি থেকে বের হন।
পরে শিফা আক্তার ঘর ঝাড়– দেয়ার জন্য মামা বাদল মিয়ার রুমে ঢুকে খাটের নিচে কামরুলের লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করলে বাদল মিয়া শিফা আক্তারকে জোরপূর্বক গোসল খানায় নিয়ে তাকে ছুরি দিয়ে জবাই করে একই কায়দায় লাশ চাদর দিয়ে ঢেকে পাশের রুমের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে।
এদিকে কামরুলকে না পেয়ে তার বাবা ও মা এলাকায় মাইকিং করিয়ে বাড়িতে এসে দেখেন শিফাও নেই।
পরে শ্যালক বাদলকে সাথে নিয়ে কামাল হোসেন শিফা ও কামরুলকে খুজতে বাঞ্ছারামপুর ফেরিঘাট এলাকায় যান। এক পর্যায়ে কামালকে কিছু বলেই বাদল মিয়া সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকসায় করে পালিয়ে যান।
এদিকে কামাল হোসেনের স্ত্রীসহ প্রতিবেশীরা বিভিন্ন স্থানে খুঁজাখুজির পর ঘরে খাটের নীচে কামরুল ও শিফা আক্তারের লাশ দেখতে পায়।
এ ঘটনায় নিহতদের পিতা কামাল হোসেন বাদি হয়ে গত বুধবার রাতে বাদল মিয়ার বিরুদ্ধে বাঞ্চারামপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে বাঞ্চারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সালাহউদ্দিন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত বাদল মিয়া আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তাকে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছে।