স্টাফ রিপোর্টার:
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গত দু-সপ্তাহে বিমানযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ফিরেছেন প্রায় ৯ হাজার প্রবাসী। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গত ১ মার্চ থেকে তারা দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে গত ১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৬৭জন এবং ১৬ মার্চ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত ২০৭জন দেশে ফিরেছেন।
গত মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইমেইলে আসলে বুধবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে থেকে এই তথ্য জানান হয়। মন্ত্রণালয় থেকে প্রবাস ফেরতদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সতর্কতামূলক হিসেবে এসব প্রবাসীদের সবাইকে ১৪ দিন করে হোমকোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মাত্র ১৪ জনকে রাখা হয়েছে হোমকোয়ারেন্টাইনে। এই ১৪ জনের মধ্যে ১২ জনই ইতালি থেকে দেশে ফিরেছেন। বাকি দুইজন এসেছেন সৌদি আরব ও ক্রোয়েশিয়া থেকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১ মার্চ থেকে গত ১৭ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাসিন্দা ৮ হাজার ৯৭৪ জন প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। ইতিমধ্যেই প্রবাসীরা তাদের নিজ-নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইমেইল বার্তায় জানানো হয়েছে। তারা সবাই করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরেছেন বলেও ওই বার্তায় উল্লেখ করা হয়। এছাড়া প্রবাসীদেরকে দেশে আসার তারিখ থেকে পরবর্তী ১৪দিন পর্যন্ত তাদেরকে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশকে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন কন্ট্রোল অফিসের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে হোমকোয়ারান্টাইন বিষয়ে ও তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য প্রেরণ করার জন্য বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনার চিঠি জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে জেলা পুলিশ।
এদিকে, হোমকোয়ারান্টাইনে না থাকায় জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী গ্রামে ওমান ফেরত এক যুবককে ও জেলার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের ছতুরা শরীফ গ্রামের ইটালী প্রবাসী এক যুবককে বুধবার দুপুরে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ নাসির উদ্দিন সারোয়ার ও আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তাহমিনা আক্তার রেইনা বুধবার দুপুরে পৃথক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ওই দুই যুবককে পাঁচ হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদেরকে হোমকোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেন। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিমানযোগে প্রবাস ফেরতদের তালিকা পেয়েছি। নির্দেশনা মোতাবেক ওই তালিকা জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনকে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) তালিকা পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যারা মার্চ মাসে বিমানযোগে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন তাদের একটি তালিকা পেয়েছি। প্রবাসীদের প্রতি খেয়াল রাখার জন্য ওই চিঠিতে বলা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শাহ আলম বুধবার বিকেলে বলেন, “ মার্চ মাসে বিমানযোগে বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবাসীদের তালিকা আমরা পেয়েছি। ওই তালিকা থেকে তাঁদেরকে খোঁজে বের করে হোমকোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। যে কারণে আজ বৃহস্পতিবার থেকে হোমকোয়ারেন্টাইন অনেক বেড়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে। বৃহস্পতিবার জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে মাঠ পর্যায়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে হোমকোয়ারেন্টাইন আরো জোরদার করার পরিকল্পনা নেয়া হবে। তিনি বলেন, যাদের দেশে ফেরার ১৪ দিন অতিক্রম হয়েছে তাদের হোমকোয়ারেন্টাইনে থাকার দরকার নেই। যাদের অতিক্রম হয়নি তাদেরকে খোঁজে বের করে হোমকোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, আমরা সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহবান জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খাঁন স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমরা জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করেছি। যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। কেউ যদি হোমকোয়ারেন্টাইনে না থাকতে চান তাকে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করা হবে। তালিকা ধরে প্রত্যেকের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, হোমকোয়ারেন্টাইনে না থাকায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে দুই যুবককে অর্থদণ্ড করা হয়েছে।