Advertisement

ঝুঁকিপূর্ন গ্যাসের ব্যবহার ১৫ চুন ফ্যাক্টরীসহ ৫শতাধিক অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন

NewsBrahmanbaria

এই আর্টিকেল টি ৯৭১।

স্টাফ রিপোর্টারঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের বাকাইল গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির নলকূপ ও জমির মাটি ভেদ করে উদগীরণকৃত গ্যাস (পকেট গ্যাস) বিপদজনক উপায়ে ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পঙ্কজ বড়–য়ার নেতৃত্বে গঠিত ভ্রাম্যমান আদালত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত মজলিশপুর ইউনিয়নের বড় বাকাইল, বাকাইল বাজারসহ আশপাশ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযানকালে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম এবং সদর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল আহমেদের অবৈধ চুন ফ্যাক্টরীসহ অবৈধভাবে গড়ে উঠা ১৫টি চুন ফ্যাক্টরী ও গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক আবাসিক অবৈধ গ্যাসের সংযোগ, ১০টি হোটেলের বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ সময় ভ্রাম্যমান আদালত গ্যাস সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত প্রায় ২০ হাজার মিটার প্লাষ্টিকের পাইপ এবং ১২০টা ড্রাম ধ্বংস করে।

ভ্রাম্যমান আদালত চলাকালে সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এ.বি.এম মশিউজ্জামান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ৬জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর ডিজিএম জাহিদুর রেজা, বিজিএফসিএলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (উৎপাদন) জাকির হোসেন তরফদার, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি, সদর থানার ওসি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত ছিলেন।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, গত প্রায় ১৫ বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের বাকাইল গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির নলকূপ ও জমির মাটি ভেদ করে গ্যাস উদগরিত হচ্ছে। গ্রামবাসী এই গ্যাস প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে বাড়িতে নিয়ে রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন। রাস্তার পাশে থাকা গাছের উপর দিয়ে এই গ্যাস পাইপের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রামে সরবরাহ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, গত ১০/১২ বছর ধরে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ও সদর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল আহমেদের নেতৃত্বে বাকাইল গ্রামে ১৫/১৬টি অবৈধ চুন ফ্যাক্টরী গড়ে উঠেছে। এসব চুন ফ্যাক্টরীতে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব উদগরিত গ্যাস (পকেট গ্যাস)। এছাড়া গ্রামের আরেকটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এই গ্যাস প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে মজলিশপুর, সুহিলপুর ও বুধল ইউনিয়নের (তিন ইউনিয়ন) কয়েক হাজার বাড়িতে অবৈধভাবে সংযোগ দিয়েছে।এই সিন্ডিকেকেট লোকেরা প্রতি চুলা থেকে মাসে ৫শত টাকা করে আদায় করছে।

গ্রামের হাজী অহিদ মিয়া বলেন, তার বাড়িতেও একটি গ্যাস সংযোগ আছে। বৃহস্পতিবার ভ্রাম্যমান আদালত সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তিনি বলেন, তিনি প্রতিমাসে গ্যাস বিল বাবদ গ্রামের মাঈনুদ্দিন মিয়াকে ৫শত টাকা দেন। তিনি বলেন, শুধু তিনিই নয়, তিন ইউনিয়নের সকল গ্রাহকই প্রতি মাসে ৫শত টাকা করে গ্যাস বিল দেন। বড় বাকাইল গ্রামের সোহরাব মিয়া বলেন, গ্রামের নূর মিয়া, মাঈনুদ্দিনসহ ৬/৭জন এই অবৈধ গ্যাসের ব্যবসা করে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা রোজগার করছেন। প্রতি গ্রাহক মাসে ৫শত টাকা গ্যাস বিল দিতে হয়।

মজলিশপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার হাসান মিয়া বলেন, আমরা নিরীহ মানুষ। এসব অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতে পারিনা। তিনি বলেন, প্রভাবশালী লোকেরা এই গ্যাসের ব্যবসা করেন। এই গ্যাস ব্যবহার করে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, সদর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল আহমেদ, গ্রামের কাশেম, আলী মিয়া, নান্নু মিয়াসহ ১৫/১৬জন চুনের ফ্যাক্টরী গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, তারা খুবই প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারেন না।

গ্রামের কলেজ ছাত্র আরমান মিয়া বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি অবৈধভাবে গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করতে না পারে তাহলে যে কোন সময় এই গ্রামে ঘটতে পারে মাগুরছড়ার মতো ভয়াবহ অগ্নিকাড।গ্রামের মুরুব্বী ধন মিয়া বলেন, জানি ঝুঁকি আছে, কিন্তু আল্লার দান হিসেবেই আমরা এই গ্যাস ব্যবহার করছি। তিন ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার এই গ্যাস ব্যবহার করছেন।

এদিকে বিজিএফসিএলের একটি সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৩নং গ্যাস ফিল্ডের কূপে ওই সমস্যা হয়। ওই সময় প্রায় ২হাজার ফুট মাটির নিচে দিয়ে গ্যাস লিকেজ হয়। পরে কুপে গ্যাসের প্রেসার কমতে থাকে। ২০০৬ সালে কুপ থেকে বের হওয়া গ্যাস গ্রামের বিভিন্ন দিক দিয়ে বেরোতে থাকে।
এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালতে থাকা বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর ডিজিএম (বিতরণ) জাহিদুর রেজা বলেন, এটা পকেট গ্যাস। আগামী এক-দুই বছরের মধ্যেই এই গ্যাস উগগিরন বন্ধ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালতে থাকা ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন বলেন, এটি ঝুঁকিপূর্ন এলাকা। বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে জানাব।

এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালতে থাকা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, শুক্রবার থেকে তিনদিন এলাকায় সর্তকীকরনের জন্য মাইকিং করাব। এর পরেও যদি কেউ অবৈধভাবে এই গ্যাস ব্যবহার করেন তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালতের নেতৃত্ব দেওয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ বড়–য়া বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এই অভিযান পরিচালনা করছি। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী অবৈধভাবে গড়ে উঠা ১৫টি চুন ফ্যাক্টরী ও গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক আবাসিক গ্রাহকের অবৈধ গ্যাসের সংযোগ, ১০টি হোটেলের বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এছাড়াও গ্যাস সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত প্রায় ২০ হাজার মিটার প্লাষ্টিকের পাইপ, ১২০টা ড্রাম ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি বলেন, শুক্রবার বুলড্রেজার দিয়ে অবৈধ চুন ফ্যাক্টরীগুলো গুড়িয়ে দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে বিজিএফসিএল এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (উৎপাদন) জাকির হোসেন তরফদার জানান, ঝুঁকিপূর্নভাবে গ্যাস উদগরিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছুই করার নেই। তিনি বলেন, আগামী দুই-তিন বছর পরে এই গ্যাস আর থাকবেনা।

Advertisement

Sorry, no post hare.

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com