স্টাফ রিপোর্টার:
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে দিপ্তী রানী দাস নামক এক প্রসূতির জন্ম দেয়া সন্তান নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। জন্ম দেয়া সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে এই নিয়ে বাঁধে বিপত্তি। প্রসূতির স্বজনদের দাবি আল্টাসনোর রিপোর্ট অনুযায়ী দিপ্তীর ছেলে সন্তান হওয়ার কথা কিন্তু সিজারিয়ান অপারেশনের পর তাদের কোলে কন্যা শিশু তুলে দেয়া হয়েছে। অপর দিকে হাসপাতালের চিকিৎসকদের দাবি সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে দিপ্তী রানী দাসের কন্যা শিশু জন্ম হয়েছে। তার স্বজনদের কোলে কন্যা শিশুই তুলে দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে রোববার দুপুরে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শাহআলম, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও সেবিকারা দীর্ঘ আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের জানান, দিপ্তী রানী দাসের কন্যা সন্তানই জন্ম হয়েছে। আল্টাসনোগ্রাফ করা চিকিৎসকগন জানান, তারা দিপ্তী রানী দাসের আল্টাসনো রিপোর্টে সম্ভাব্য সন্তান নিয়ে কোন মন্তব্য করেন নি। রোববার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পৌর এলাকার পাইকপাড়ার সজিব দাসের স্ত্রী দিপ্তী রানী দাসের সিজারিয়ান অপারেশন হয়।
সিজারিয়ান অপারেশনের পর হাসপাতালের সেবিকারা (নার্স) দিপ্তী রানী দাসের মা শোভা রানী বিশ্বাসের কোলে কন্যা শিশু তুলে দিলে তিনি তাঁর নাতিনকে কোলে নিতে আপত্তি করেন। এ সময় শোভা রানী বিশ্বাস বলেন, তার মেয়েকে তিনবার আল্ট্রাসনো করা হয়েছে। প্রতিবারই চিকিৎসক তার মেয়ের গর্ভে ছেলে সন্তান আছে বলে তাদেরকে জানান। যে কারণে তিনি কন্যা শিশুর জন্ম হওয়ার বিষয়টি মানতে পারছেন না।
সরজমিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, রোববার বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তিনটি শিশুর জন্ম হয়। সিজারিয়ান অপারেশন করা প্রসূতিরা হলেন, সদর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের শারমীন আক্তার, সদর উপজেলার সুহিলপুর গ্রামের শাহআলমের স্ত্রী তামান্না আক্তার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার পাইকপাড়া গ্রামের সজিব দাসের স্ত্রী দিপ্তী রানী দাস। সিজারিয়ান অপারেশনে শারমীন আক্তার ও তামান্না আক্তার ছেলে এবং দিপ্তী রানী দাস কন্যা শিশুর জন্ম দেন। অপারেশনের পর হাসপাতালের সেবিকারা শারমীন আক্তার ও তামান্না আক্তারের অভিভাবকদের কোলে ছেলে শিশু এবং দিপ্তী রানী দাসের মায়ের কোলে কন্যা শিশু তুলে দেন।
এ সময়ই জটিলতার সৃষ্টি হয়। দিপ্তীর মা শোভা রানী বিশ্বাস তার নাতিনকে কোলে নেয়ার সময় আপত্তি করেন। তিনি জানান, তার মেয়েকে তিনবার আল্ট্রাসনো করা হলে প্রতিবারই চিকিৎসক তার মেয়ের গর্ভে ছেলে সন্তান আছে বলে তাদেরকে জানান। যে কারণে তিনি বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। তিনি তামান্না আক্তারের স্বজনদের কাছে দেয়া ছেলে সন্তানটি তার নাতি বলে দাবি করেন।
এদিকে তামান্না আক্তারের স্বজন মোঃ বকুল মিয়া জানান, সিজারিয়ান অপারেশনে তামান্না আক্তারের ছেলে হয়েছে। সেবিকারা তাদের কোলে ছেলে সন্তানই তুলে দিয়েছে। দিপ্তী রানীর মা শোভা রানী বিশ্বাস কেন তার নাতিকে নিজের নাতি বলে দাবি করেছেন এটি তার বোধগম্য নয়। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জোর গলায় বলছেন, নবজাতক নিয়ে তাদের কোনো ধরণের ভুল হয় নি। এনিয়ে কারো বির্তক করাও উচিত নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি কাছাকাছি সময়ে জন্ম নেয়া তিন শিশুকে তাদের নিজ নিজ স্বজনদের কোলেই দেয়া হয়েছে। এরপরও কোনো ধরনের শঙ্কা থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ শওকত হোসেন জানান, এ নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির কোনো ধরণের সুযোগ নেই। তারপরও যদি এ নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে মেয়ে শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শাহআলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বিষয়টি জানার পর রোববার দুপুরে তিনি, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও সেবিকারা দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। এ সময় আল্টাসনোগ্রাফ করা চিকিৎসকরা জানান, তারা দিপ্তী রানী দাসের আল্টাসনো রিপোর্টে সম্ভাব্য সন্তান নিয়ে কোন মন্তব্য করেন নি।
তিনি দৃঢ়তার সাথে জানান, সিজারিয়ান অপারেশনে দিপ্তী রানী দাসের কন্যা শিশুই জন্ম হয়েছে। এনিয়ে তাদের কোন আপত্তি থাকলে তারা কন্যা শিশুর ডিএনএ টেষ্ট করাতে পারেন। উল্লেখ্য, দিপ্তী রানী দাসের প্রথম সন্তানটি ও কন্যা। রোববার জন্ম নেয়া শিশুটি তার দ্বিতীয় সন্তান। পরিবারের লোকদের স্বপ্ন ছিলো এবার দিপ্তীর ছেলে শিশু হবে।