স্টাফ রিপোর্টার:
শারীরিক প্রতিবন্ধী আবুল মিয়া। বয়স পঞ্চাশ। চলার শক্তি না থাকলেও অন্যের বাড়িতে গিয়ে হামলা-মারধোরের অভিযোগে মামলার আসামী হয়েছেন। শুধু তাই নয় পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। জানান, তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত এবং ভাতা সুবিধেভোগী। পায়ে সমস্যার কারণে যেখানে হাঁটতে পারেননা সেখানে অন্যের বাড়িতে গিয়ে কিভাবে মারধোর করলেন সেটাই তার প্রশ্ন। পূর্ব শত্রুতা মেটাতে করা ওই মামলাটিতে আরো অনেক নিরপরাধ লোকজনকে আসামী করার অভিযোগ উঠেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের বরিশল গ্রামে লোহার রড দিয়ে অন্তঃসত্বা কাজল বেগমের পেটে আঘাত করে ৪ মাসের সন্তান নষ্ট করার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় এই মামলা হয় ১লা নভেম্বর। কাজল বেগমের স্বামী মোঃ সালমান মিয়া বাদী হয়ে করা এই মামলায় কাজলের পিতার বাড়িতে হামলা, ভাঙ্গচুর ও লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় আসামী করা হয় ১৪ জনকে । ঘটনার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৭শে অক্টোবর। মামলা নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এলাকার লোকজন জানান, ওই দিন তুচ্ছ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এরমধ্যে মামলাটি হয়।
সরজমিনে ওই গ্রামে গেলে স্থানীয় সর্দার মোঃ ইসহাক মিয়া জানান-কাজলের ভাই আলমগীরের ফোনে তাদের বাড়িতে যাই। কিন্তু আমাকে কেউ হামলার কথা বলেনি। স্থানীয় ইউপি সদস্য রমজান আলী বলেছেন-ঘটনাস্থলে গিয়েছি। কিন্তু কারো কাছ থেকে এমন ঘটনার কোন স্বাক্ষ্য পায়নি। মামলা দায়ের হওয়ার পর ওইদিন রাতেই পুলিশ যায় গ্রামে ।
হারিজ মিয়ার স্ত্রী বলেন-আমার স্বামী ব্ল্যাড ক্যান্সারের রোগী। বাড়ির সামনের দোকানটিই আয়ের উৎস। দোকান বন্ধ থাকায় সন্তানদের নিয়ে বিপাকে আছি। রোশেনা বেগম বলেন, ছেলেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ায় কেউ কাজে যেতে পারছে না।
কুলসুম বেগম জানান, গ্রামের সিএনজি অটোরিকসা চালক রুবেলের ওপর হামলা হয় কয়েক মাস আগে। ওইসময় রুবেলকে উদ্ধার করায় এ মামলায় আমার চার ছেলেকে আসামী করা হয়েছে। কাজ বন্ধ থাকায় তাদের অভাব অনটনে দিন কাটছে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, পূর্ব বিরোধেই এই মামলার সুত্রপাত। কাজল বেগমের পিতা আরব আলীর সাথে একই গ্রামের হোসেন মিয়ার বিরোধ রয়েছে। এর জেরে হোসেন মিয়া, তার ছেলে রুবেলকে মামলার আসামী করা হয়। গত ২১সেপ্টেম্বর হোসেন মিয়ার ছেলে সিএনজি অটোরিকসা চালক মোঃ রুবেল মিয়াকে বেদম মারধোর করে গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে নূর মিয়ার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। তাকে মারধোর করে রাস্তার ফেলে দেয়। আহত রুবেলকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও বাধা দেয় নূরুর ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। এঘটনায় মামলা দিতে গেলে এজাহারে নূরু আর তার ভাই মানিকের নাম থাকায় পুলিশ মামলা নিতে আপত্তি করে। ২৬ তারিখ মামলা হয়।
রুবেলের মামা মোঃ মোনায়েম বলেন, পুলিশ ৪ দিন পর্যন্ত আমাদের মামলা নেয়নি। এসব বিরোধের জের ধরেই সর্বশেষ মামলাটি হয়। এভাবে মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে গ্রামের লোকজনকে হয়রানী করার অভিযোগ নূরু মিয়ার বিরুদ্ধে। তবে নূরু মিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এসব ঘটনার সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে।