এনবি ডেস্ক:
গত মঙ্গলবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সড়কের পাশ স্কুলের ছাত্রকে দিয়ে শিক্ষিকার চা আনানোর ছবি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। ওই ছবিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপ ‘উইশ ফর বেটার ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ তে পোস্ট দেন পরিবর্তন ডটকম ও জাতীয় দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি আবুল হাসনাত রাফি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মুনমুন জাহান মুন ওই ছাত্রটিকে তিন কাপ চা আনতে নির্দেশ দেন। পরে বাধ্য হয়ে ওই ছাত্র স্কুলে সড়কের উপরদিয়ে তিন কাপ চা নিয়ে আসছিলেন, এমন সময় পেছনদিক দিয়ে একটি অটোরিকশা আসছিল। এসময় এক সাংবাদিক ছবিটি তুলে সাংবাদিক রাফিকে ছবিটি দেন।
সাংবাদিক রাফি ফেসবুক পোস্টে ছবিটিতে ওই স্কুল ছাত্রের চেহারা গোপন করে লিখেন- ‘আজ সকাল সাড়ে ৯টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বাইরে থেকে চা নিয়ে এই ছাত্রকে স্কুলের ভেতরে যেতে দেখা গেছে। এই ছাত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একজন শিক্ষিকা তাকে চা নিয়ে যেতে বলেছেন। শিক্ষিকার জন্য ছাত্র চা নিয়ে যাওয়া দোষের কিছু নয়। গুরুর জন্য শিষ্য চা আনতেই পারে। তবে স্কুলে দফতরি রেখে কেন তাকে চা আনতে পাঠানো হল স্কুল টাইমে? খেয়াল করে দেখুন পেছন দিক দিয়ে অটোরিকশা চলছে। তার হাতে তিনটি চায়ের কাপ!
বিঃদ্রঃ শিক্ষিকার নাম জানার পরও শ্রদ্ধা রেখে দেওয়া হয়নি।’
এই পোস্টের পর ছবিটিতে ১৬শত লাইক, কমেন্ট ও রিঅ্যাক্ট পড়ে। পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিয়ে ২২৯টি কমেন্ট পড়ে ও শেয়ার হয় ৫৪টি।
এখানে কয়েকটি কমেন্ট তুলে ধরা হলো-
এস এম জহিরুল ইসলাম ফাহিম নামের একজন লিখেছেন-‘ঘটনাটা বাংলাদেশের,একটু খেয়াল করবেন পিছনে রাস্তায় জ্যাম,যেকোনো সময় সড়ক দূর্ঘটনা ঘটতেই পারে। এখানে শিক্ষকের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়টি আমার কাছে অযোক্তিক।ছেলেটির বয়স ও মনে হচ্ছে কম।যিনি পোস্টটি করেছেন আমি উনার প্রশংসা করবো,দেশে এর থেকেও বড় ইসু নিয়ে অনেকেই কথা বলতে সাহস পায়না।আর এই বড় ইসু গুলো তৈরি হয় এসব ছোটখাটো বিষয় থেকেই।সম্মানিত শিক্ষিকা হয়তো বিষয়টা গভীরভাবে ভাবেনি,এদেশে এমন ভাবনা ভাবা ও মনে হচ্ছে অন্যায়।কমেন্ট বক্সে দেখলাম দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে আসা কিছু মানুষ পোস্টটিতে শিক্ষকের প্রতি সম্মানের দোহায় দিয়ে যুক্তি দাড় করাচ্ছে।
শামীম আহমেদ নামের একজন মন্তব্য করেছেন ‘আমাদের সময় আমরাও করেছি তবে পরিবর্তন জরুরি, বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে আমরা কেন পিছিয়ে থাকব স্কুলের শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে’।
মো.হাসান আহমেদ নামের একজন লিখেছেন,
‘ছোট সময় শিক্ষকদের কত চা সিগারেট এনে দিছি তার কোন হিসাব নেই।।।এগুলো নিয়ে অতিঃ বাড়াবাড়ি করেন আপনারা, হ্যা সিগারোট আনানোটা মহা অন্যায় বাট চা আনাতেই পারে।।ছাত্রের কাছে শিক্ষকের কিছু হক আছে’।
এস এম মাসুম লিখেছেন ‘একজন শিক্ষক যা শিখায় তার মূল্য টাকা পয়সা বা শ্রম কোনটা দিয়েই পরিশোধ করা যাবে না। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার যে ছাত্র চা নিয়ে শিক্ষক কে খাওয়াচ্ছে। পড়াতে পড়াতে ক্লান্ত লাগতেই পারে। হয়তো পিয়ন ছিল না আশেপাশে।’
এই বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর মুনমুন জাহান মুন নামের ওই শিক্ষিকা বিষয়টি স্বীকার করে সাংবাদিকতা পেশাকে তুচ্চতাচ্ছিল্ল করে অপর আরেকটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দেন। ওই পোস্টে সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলে তিনি তার পোস্টটি কেটে দেন।
এ বিষয়ে ওই স্কুল শিক্ষিকার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল জানান, ছাত্র দিয়ে চা আনার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শিক্ষা অফিসার গৌতম চন্দ্র মিত্র জানান, এমন কাজ কোন ভাবেই ক্ষমা যোগ্য নয়। স্কুল চলাকালীন সময়ে এমন ধরনের কাজ করা গুরুত্ব অন্যায়। বিষয়টি আমি সরজমিনে গিয়ে তদন্ত করব।