নিউজ ডেস্ক,
অদম্য মনোবলে ছুটে বেড়াচ্ছেন আগের মতোই পথপ্রান্তরে। এমনকি অসুস্থ শরীরে এ্যাম্বুলেন্সে চড়ে সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে কর্ম নিষ্ঠতার নজির সৃষ্টি করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তুখোর সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন জামি। চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এর সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ও দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার।
সম্প্রতি সবচেয়ে আলোচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনে সরাসরি সম্প্রচারে যুক্ত হয়ে নির্বাচনের খবরা খবর দেশের মানুষের কাছে পৌছে দেন। শুধু তাই নয় তিনি ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন এ্যাম্বুলেন্সযোগে সরাইল ও আশুগঞ্জের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি একাধিকবার সরাসরি সম্প্রচারে যুক্ত থেকে নির্বাচনের হালচাল দেশ ও জনগনের কাছে পৌছে দিয়েছেন। ২০২২ সালে রিয়াজ উদ্দিন জামির শরীরে দুরারোগ্য ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর ভারতের ক্যান্সার স্পেশালাইজড হসপিটাল মুম্বাই টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এছাড়াও তিনি সেখানকার প্রটোকল অনুযায়ী বাংলাদেশের সিএমএইচ হাসপাতাল থেকে ৬ টি ক্যামোথেরাপী সম্পন্ন করেছেন।
কিন্তু পেশায় অদম্য ছিলেন জেলার সিনিয়র এই সাংবাদিক। নব্বই দশকের শুরুতে যেভাবে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন, ঠিক একই তালে এখনো কাজপাগল হয়ে ছুটেন সংবাদ সংগ্রহে। পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকে জেলার বিভিন্ন সংবাদ জনমানুষের কাছে পৌছে দিতে টেলিভিশন ও পত্রিকার জন্য সমানতালে মাঠে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।
ছাত্রাবস্থায় মাত্র ১৯ বছর বয়সে রিয়াজউদ্দিন জামি ১৯৯৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয় থেকে প্রকাশিত প্রথম দৈনিক “দৈনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রুফ রিডার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে একই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি তাঁর কর্মদক্ষতায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে পদোন্নতি পান।
১৯৯৪ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি দেশের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর গণমাধ্যম দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। দেশের স্বনামধন্য এই পত্রিকাটিতে যোগদানের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর যোগ্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হোন। তারই ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে এই পত্রিকার নিজস্ব সংবাদদাতা ও ২০১৪ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে পদোন্নতি পান।
তিনি ১৯৯৮ সালের দেশের প্রথম টেরিস্টেরিয়াল টেলিভিশন একুশে টেলিভিশনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই টেলিভিশনটি বন্ধের আগ পর্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি আরটিভি, এনটিভিতেও কাজ করেন।
২০১২ সালের অক্টোবর মাসে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এ স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৪ সালে রাস্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ বেতারের জেলা সংবাদদাতা হিসেবে যোগদান করেন। জনকন্ঠে তার প্রচারিত ও প্রকাশিত ’সেই রাজাকার, মাদকের শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়, দেশটাকি মগের মুলূক, সমস্যার শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গ্যাস সেক্টরে হরিলুটসহ বিভিন্ন সিরিজ রিপোর্ট করে আলোচনায় আসেন জামি।
এছাড়াও তিনি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে ভারত থেকে আসা দূষিত কালো পানি, গ্যাস সেক্টর নিয়ে সিরিজ রিপোর্ট, আখাউড়া স্থলবন্দরের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে সিরিজ রিপোর্ট, মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে রিপোর্ট, আশুগঞ্জ বন্দর, আশুগঞ্জ তাপ বিদুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে আলোচিত রিপোর্ট করে ব্যাপক সাড়া ফেলেন। সাংবাদিকতা করার ফাঁকে চালিয়ে নেন পড়াশুনা। ব্যাচেলর অব আর্টস গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগেও তিনি ২০২১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনিএর আগে ২০১১, ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ব্রাহ্মণবাাড়িয়া প্রতিদিন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথেও তিনি সম্পৃক্ত। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক পুরষ্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
মেধাবী ও সাহসী সাংবাদিক জামি ১৯৭৪ সালের ৩০ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা অধ্যাপক আব্দুস সাহিদ ও মাতা ফাতেমা বেগম। তাদের ৩ পুত্র ও ৫ কন্যা সন্তানের সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
১৯৮৩ সালে জামির পিতা মরহুম অধ্যাপক আব্দুস সাহিদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজের উপাধ্যক্ষ থাকাবস্থায় প্রয়াত হন। তাঁর পিতা আব্দুস সাহিদ দীর্ঘ ২৪ বছর বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার বঙ্গবন্ধু কলেজ (কিউএম কলেজ) এ অধ্যাপনা করেন। তার নানা আবদুর রউফ ইষ্ট পাকিস্তান এডুকেশন সার্ভিসের ডাইরেক্টর এবং বড় মামা আবদুর রহিম হুমায়ুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরতলীর সাদেকপুর পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে সুদীর্ঘ সময় সুনামের সাথে এবং প্রকৃত সমাজসেবী রুপে দায়িত্ব পালন করেন। উচ্চ শিক্ষিত আবদুর রহিম পরবর্তীতে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত হন এবং ঢাকায় একাধিক জাতীয় দৈনিকে কাজ করেন। তার আরেক মামা আবদুর রহমান তথ্য মন্ত্রনালয়ের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছিলেন।
রিয়াজউদ্দিন জামি এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, সাংবাদিকতার মহান পেশায় প্রবেশের পর থেকে কোন দিন এক মুহুর্তের জন্যও কাজের প্রতি অবহেলা করিনি। অসংখ্য বড় বড় ঘটনা কাভার করেছি মাঠেময়দানে অবস্থান করে। সেই দায়িত্বশীলতা থেকে অসুস্থ হওয়া সত্বেও সমানতালে ছুঁটতে চেষ্ট করছি। সম্প্রতি তার কাজের মূল্যায়ন করে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর কর্তৃপক্ষ তাকে সিনিয়র স্টাফ রিপোটার হিসেবে পদোন্নতি প্রদান করেন। জীবনের চরম এই দুর্বিসহ অবস্থায় এমন মূল্যায়নে চ্যান্যাল টোয়েন্টিফোর কর্তৃপক্ষের প্রতি বিরল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন তিনি। আজীবন এ ঋণ শোধ হবে না বলেও জানান তিনি।
অনেকেই মনে করেন, কাজের প্রতি রিয়াজউদ্দিন জামির একাগ্রতা ও দায়িত্বশীলতা নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনের জন্য অনুকরণীয় ও অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।