নিউজ ডেস্ক,
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক মাদক বিরোধী অভিযানে গিয়ে নাজমুল হাসান নামে একজন স্কুল শিক্ষককে মারধোর ও তাকে হাতকড়া পড়ানোর অভিযোগ উঠেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এর বিরুদ্ধে। পরে স্কুল শিক্ষক নাজমুল হাসান মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান। রোববার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে পৌর এলাকার কান্দিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শিক্ষক নাজমুলের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশের হাতে নাজেহাল হওয়া শিক্ষক নাজমুল হাসান জেলার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সহেদেবপুর গ্রামের মোঃ আবদুল হাই ভূইয়ার ছেলে।
তিনি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে পৌর এলাকার কান্দিপাড়ার মৃত আবদুল আওয়ালের বাড়িতে স্বপরিবারে ভাড়া থাকেন। নাজমুল হাসান বিজয়নগর উপজেলার দক্ষিণ পেটুয়াজুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। নাজমুল হাসানের পরিবারের অভিযোগ কান্দিপাড়ার প্রয়াত আবদুল আওয়ালের বাড়ির তৃতীয় তলায় বসবাস করেন আবদুল আওয়ালের বড় ছেলে রাজীব আহমেদ। দ্বিতীয় তলায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন ভাড়াটিয়া নাজমুল হাসান। সন্ধ্যা ৬টার দিকে নাজমুল হাসানের বৃদ্ধ বাবা আবদুল হাই ভূঈয়া-(৮০) ছাদে শুকাতে দেয়া কাপড় আনতে বাসার ছাদে যান। এ সময় আবদুল আওয়ালের বাড়িতে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে ওসির নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের আটজন সদস্য। তারা তালা ভেঙ্গে তৃতীয়তলায় রাজিবের ঘরে প্রবেশ করেন।
এ সময় ডিবি পুলিশের সদস্যরা বাসার ছাদ থেকে বৃদ্ধ আবদুল হাই ভূইয়াকে ডেকে রাজীবের ঘরে নিয়ে যান। এদিকে বৃদ্ধ বাবা ঘরে না ফেরায় নাজমুল হাসান ছাদের দিকে যাওয়ার পথে তিনি দেখেন তার বাবাকে রাজিবের ঘরে ডিবি পুলিশ দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। নাজমুল হাসান রাজিবের কক্ষে গিয়ে ডিবি পুলিশের কাছে তাঁর বাবাকে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের সদস্যরা নাজমুলকে তার বাবার সামনেই বেদম মারধোর করে। পরে তার দুই হাতে হাতকড়া পরিয়ে রাজিবের ঘরের বিছায়নায় নাজমুলকে বসিয়ে পাশে দুটি ফেনসিডিলের বোতল রেখে ছবি তুলেন। পরে নাজমুলের কাছ থেকে থেকে পুলিশ একটি মুচলেকা আদায় করে তাকে ছেড়ে দেন।
শিক্ষক নাজমুল হাসান বলেন, আমার বাবা বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ। বাবাকে রাজিবের ঘরে দাঁড় করিয়ে রাখার কারন জানতে জানতে ডিবি পুলিশ আমাকে মারধোর করে ও আমার হাতে হাতকড়া পড়ায়। পরে আমাকে রাজিবের ঘরের বিছানায় বসিয়ে আমার পাশে দুটি ফেন্সিডিল বোতল রেখে ছবি তুলে। পরে আমি ডিবি পুলিশের কাজে বাঁধা দিয়েছি এবং এতে আমি অনুতপ্ত লিখে আমার কাছ থেকে মুচলেকা আদায় করে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করব। নাজমুল হাসানের পিতা আবদুল হাই ভূইয়া বলেন, আমার চোখের সামনেই বিনা কারণে পুলিশ আমার ছেলেকে মারধোর করেছে। আমি ও আমার পরিবার এখন পুলিশের আতঙ্কের মধ্যে আছি।
এ ব্যাপারে অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, নাজমুল হাসান একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি আমাদের মাদক উদ্ধার অভিযানে বাঁধা দিয়েছেন। এই মর্মে মুচলেকাও দিয়েছেন। তিনি বলেন, মারধোর ও হাতকড়া পরানোর অভিযোগ সঠিক না।এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, আমাদের মাদক উদ্ধারের অভিযান চলমান রয়েছে। মাদক উদ্ধার অভিযানে পুলিশ সদস্যদের মাদক উদ্ধারের অভিযান ভিডিও করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অভিযানের পুরো ভিডিও দেখে বিষয়টি সম্পর্কে বলতে পারব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।