নিউজ ডেস্ক,
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিখোঁজের তিনদিন পর মাদরাসার ছাত্রী নাঈমা আক্তার-(১৩) ও মাইমুনা আক্তার-(১৫) এর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে নাইমা আক্তারের বাবা বিল্লাল মিয়া বাদি হয়ে মাদরাসার দুই শিক্ষককে আসামী করে ধর্ষণ শেষে হত্যার অভিযোগ এনে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় আসামীরা হলেন, সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের ময়না বেগম ইসলামিয়া হাফিজিয়া মহিলা মাদরাসার দুই শিক্ষক হাফেজ জুনায়েদ খন্দকার (২৮) ও হাফেজ রায়হান খন্দকার (২৬) সহ অজ্ঞাত আরও ৭/৮জন। হাফেজ জুনায়েদ খন্দকার ও হাফেজ রায়হান খন্দকার সদর উপজেলার পয়াগ গ্রামের আব্দুল খায়ের খন্দকারের ছেলে। মামলার পর পর পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে।
নিহত দুই শিক্ষার্থীরা উপজেলার একটি মাদরাসার হিফজ বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তারা মাদরাসাতেই থাকতো। গত মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের সাদেকপুর গ্রাম থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মাদরাসাটি ২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়। গত কয়েকদিন আগে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা শেষে এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। মাদরাসার আবাসিকসহ সকল শিক্ষার্থী এবং হত্যার শিকার হওয়া দুই শিক্ষার্থী এক সপ্তাহের ছুটি কাটাতে বাড়ি চলে যায়। ছুটি শেষ হবার পর গত ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় এক ছাত্রীকে তার বোন ও অপর ছাত্রীকে তার মা মাদরাসায় বুঝিয়ে দিয়ে আসেন।
গত ২৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ আবুল খায়ের দুই শিক্ষার্থীর নিখোঁজের বিষয়টি পরিবারের সদস্যের মোবাইল ফোনে জানান। দুই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা মাদরাসায় গেলে মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ জুনায়েদ খন্দকার ও হাফেজ রায়হান খন্দকার বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখাতে বললে মামলার আসামী মাদরাসার দুই শিক্ষক ছল-ছাতুরীও কুটকৌশল অবলম্বন করেন শিক্ষার্থীদের পাওয়া যাবে বলে পরিবারের সদস্যের আশ্বস্ত করেন। তারা এক পর্যায়ে মাদরাসা থেকে চলে চলে যান। গত মঙ্গলবার ভোর সকালে সাদেকপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের জামে মসজিদে আজান দিতে বাড়ি থেকে বের হন এক ব্যক্তি। মসজিদ থেকে অনুমান ৩০-৪০ হাত পূর্বদিকে কাদা পানিতে দুই শিক্ষার্থীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন ওই লোক। স্বজনরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের লাশ সনাক্ত করে। পরে উদ্ধার করে তাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। সদর থানা পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছে দুই শিক্ষার্থীর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। সুরতহাল প্রতিবেদন দুই শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন স্থানসহ স্পর্শকাতর স্থানে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।
মামলায় বলা হয়, আসামী হাফেজ জুনায়েদ খন্দকার ও তার ভাই হাফেজ রায়হান খন্দকার গত ২৩ আগস্ট সন্ধ্যা অনুমান ছয়টার পর থেকে ২৭ আগস্ট ভোর অনুমান সাড়ে চারটার মধ্যে যে কোনো সময় মাদরাসায় কিংবা অন্য কোনো অজ্ঞাত স্থানে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ করেছে। পরে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে মাদরাসা শিক্ষক দুই ভাই তাদের বাবা-মা ও স্ত্রীদের সহায়তায় দুই শিক্ষার্থীকে শ্বাসরুদ্ধ করে করে হত্যা করে। পরে তাদের লাশ সাদেকপুর ইউনিয়নের জামে মসজিদের পূর্বদিকে জমির উপর কাদা পানিতে ফেলে রাখে।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, মাদরাসার দুই শিক্ষার্থীর লাশ পাওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা অভিযুক্ত দুই আসামীকে গ্রেপ্তার করে তাদেরকে জিজ্ঞাসাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে সোপর্দ করেছি।