নিউজ ডেস্ক,
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন শোভনের সমর্থকদের আনন্দ মিছিলে প্রকাশ্যে গুলি করে ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুল রহমান ওরফে ইজাজকে (২২) হত্যার ঘটনায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ মে) রাতে নিহত ইজাজের পিতা আমিনুর রহমান বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
নিহত আশরাফুল রহমান ওরফে ইজাজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জালাল হোসেন ওরফে খোকাকে প্রধান আসামী এবং মিছিলে গুলি বর্ষনকারী জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি হাসান আল ফারাবী ওরফে জয়কে ২নং আসামী করা হয়েছে। এছাড়াও আরো ১৪জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিহত আশরাফুল রহমান ইজাজের নামাজে জানাযা শেষে রাতেই সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের মুসলিমপাড়া তার গ্রামের বাড়ির কবরস্থারে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
নিহত আশরাফুল রহমান ওরফে ইজাজ সদ্য সমাপ্ত সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস প্রতীক) ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভনের পক্ষে কাজ করেছেন। আসামি হাসান আল ফারাবী ওরফে জয়ও শাহাদাৎ হোসেন শোভনের পক্ষে কাজ করেছেন।
আসামি হাসান আল ফারাবী ওরফে জয়সহ মামলার অপর আসামীরা মামলার প্রধান আসামী, শহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি জালাল হোসেন খোকার অনুসারী।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কলেজপাড়ার বাসা থেকে কলেজে আসা-যাওয়া করার সময় জালাল হোসেন খোকার সাথে নিহত ইজাজের বিরোধ সৃষ্টি হয়। খোকা তার অনুগত বাহিনীর মাধ্যমে কলেজপাড়ায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। গত বুধবার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলাকালে ইজাজ খ্রীষ্টিয়ান মিশন প্রাইমারি স্কুল ভোট কেন্দ্রে ভোটারের সারিতে দাঁড়ালে জালাল হোসেন খোঁকা জোরজবরদস্তি করে ভোট দিতে গিয়ে সারি ভেঙে ধাক্কা দিয়ে ইজাজকে বের করে দেন। এর প্রতিবাদ করলে খোকার নেতৃত্বে আসামিরা ইজাজকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
বুধবার বিকেল সোয়া ছয়টার দিকে মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফলাফলে চেয়ারম্যান পদে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন বিজয়ী হওয়ার খবর পেয়ে তার সমর্থকরা আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিলটি কলেজপাড়া এলাকার জামাল মিয়ার বাড়ির সামনের রাস্তায় পৌঁছলে জালাল হোসেন খোকাসহ আসামিরা পিস্তল, রামদাসহ বিভিন্ন দেশি অস্ত্র নিয়ে ইজাজ ও তাঁর বন্ধুদের পথরোধ করেন। জালাল হোসেন খোকা তাঁর হাতে থাকা পিস্তল হাসান আল ফারাবী ওরফে জয়ের হাতে তুলে দিয়ে ইজাজকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন। হাসান আল ফারাবী ওরফে জয় গুলি করলে আশরাফুল রহমান ওরফে ইজাজ মাটিতে লুটিয়ে পরে। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে ইজাজ মারা যান।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন বলেন, নিহত ইজাজ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলো। সে আমার নির্বাচন করেছে। পূর্ব বিরোধের জের ধরে আনন্দ মিছিলে প্রকাশ্যে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই হত্যাকান্ডের বিচার চাই।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন বলেন, নিহতের বাবা বাদী হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১৫জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।