নিউজ ডেস্ক,
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেনারেল হাসপাতালের তত্তাবধায়ক মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামানের মৃত্যুর ৪৮ ঘন্টা না পেরুতেই পরিবার পরিজন নিয়ে পিকনিকে গেছেন ৩৫জন চিকিৎসক। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ২৫জন চিকিৎসক রয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কেউ মুখ না খোলায় জেনারেল হাসপাতালের মোট কতজন চিকিৎসক পিকনিকে গেছেন তার সঠিক সংখ্যা বলা যায়নি।
চিকিৎসকরা পরিবার পরিজন জন হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার পুটিজুরি পাহাড়ে অবস্থিত পাঁচতারকা মানের “দ্যা প্যালেস রিসোর্ট” গেছেন। এনিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সচেতন মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডাঃ ওয়াহিদুজ্জামান কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুর ৪৮ ঘন্টা না পেরুতেই শোকাবহ পরিবেশে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট চিকিৎসকদের একটি দল তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মঙ্গলবার সকালে পিকনিকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। বিকেলে তাদের সাথে যোগ দেন আরো ১০জন চিকিৎসক ও তাদের পরিবার। সব মিলিয়ে হবিগঞ্জের “দ্যা প্যালেস রিসোর্ট” এ প্রায় ২০০ লোকের পিকনিক হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বলেন, আমাদের তত্তাবধায়ক স্যারের মৃত্যুর ৪৮ ঘন্টা না পেরুতেই চিকিৎসকদের পিকনিকের আয়োজন কোন অবস্থাতেই সঠিক হয়নি। এখানে মানবতা, বিবেকবোধের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার তারা ফিরে আসার কথা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন স্টাফ জানান, এবার চিকিৎসকরা অনেকটা চুপিসারে পিকনিকে গেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক জানান, তত্তাবধায়কের স্যার যেদিন মারা যান সেদিনও ওই চিকিৎসকরা স্যারের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে ঝামেলা করে। স্যার নীতিতে অটল ছিলেন। কোন প্রকার আপোষ করেননি। তার মতো একজন চিকিৎসকের অকালে বিদায় নেওয়া বর্তমানে শুধু চিকিৎসক সমাজ নয় দেশেরও অপরনীয় ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চাকুরিরত হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) রানা নূরুস সামস ও ফায়েজুর রহমানকে বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আরএমও ফাইজুর রহমান বলেন, আমি ও ডা. রানা নূরুস সামস বদলির আদেশ পেয়েছি। আমরা এখন ঢাকায় আছি। পিকনিকের বিষয়টি আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি এড. আবদুন নূর বলেন, অফিস খোলার দিন এত চিকিৎসক পিকনিকে যাওয়ায় রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। পিকনিকে যাওয়া সঠিক হয়নি। এছাড়া হাসপাতালের তত্তাবধায়কের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে না উঠতেই ২ দিনের মাথায় এ ধরনের পিকনিকের আয়োজন নিঃসন্দেহে অমানবিক। হাসপাতালের তত্তাবধায়ক একজন ভালো মানুষ এবং সদর হাসপাতালে তিনি এক আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন তার এ অবদানের জন্য রোগীসহ সাধারণ মানুষরা শোকাহত। তবে চিকিৎসক সমাজের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা মৃত্যুর রেশ না কাটতেই এ ধরনের আনন্দ ফুর্তির আয়োজনটি সাধারণ মানুষ আশা করেননি।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এবং জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আবু সাঈদ বলেন, মঙ্গলবার বিএমএর পূর্ব নির্ধারিত পিকনিক ছিলো। অনেক আগেই রিসোর্ট ভাড়া নিয়েছিলাম। হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডাঃ ওয়াহীদুজ্জামান মারা যাওয়ায় বিএমএর পিকনিক স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, রিসোর্টে চিকিৎসকদের নামে রুম বুকিং ছিলো। বিএমএ পিকনিক বন্ধ করায় অনেক চিকিৎসক পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বউদ্যোগে সেখানে গিয়েছে। এর সাথে বিএমএর কোন যোগসূত্র নেই।
এ ব্যাপারে দ্যা প্যালেস রিসোর্টের সুপারভাইজারের সাথে মোবাইল ফানে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ৩ বেলা খাবারসহ ১ হোটেলের ১ দিনের ভাড়া ২১ হাজার টাকা। বুকিং দিতে হলে আগেই দিতে হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিকিৎসকদের পিকনিকের জন্য এই হোটেলে বেশ কিছু রুম বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন।