নিউজ ডেস্ক,
এবার অন্যরকম ঈদ আমেজ বিরাজ করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৩৫ বেদে পরিবারে। এক সময় নদীতে ভেসে থাকা নৌকায় আর মহাসড়কের পাশে পলিথিনের ডেরায় জীবন কাটলেও এখন পাল্টেছে সেই করুণ দৃশ্যের। এবার তাদের ঈদ কাটবে নিজের করে পাওয়া আধাপাঁকা ঘরে। গেল মার্চে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তাদের পুনর্বাসিত করে সরকার।
এদিকে ঘর পেয়ে সম্মানের সাথে বাঁচতে সন্তানদের শিক্ষিত করার পাশাপাশি আদি পেশা পাল্টে সমাজের মূলশ্রোত ধারায় ফিরতে চায় বেদে পরিবারগুলো।
তাদেরই একজন রিমা বেগম। কদিন আগেও থাকতেন কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে পাশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুলতানপুরে। পলিথিনের ছোট্ট খুপড়িতেই পরিবার নিয়ে নানা কষ্টে দিন কাটত তার। তবে সে পরিস্থিতির এখন পরিবর্তন ঘটেছে। এখন আশ্রয়নের ঘর পেয়ে পরিবার নিয়ে সুখেই দিন কাটছে রিমা বেগমের। আদি পেশা সাপ খেলা দেখানোসহ সিঙ্গা ফু দেয়ার মত পেশা পাল্টে খুব শীঘ্রই দিবেন চায়ের দোকান।
রিমার মত শিল্পী, সঙ্গীতা, পিংকী, লালনসহ ৩৫ বেদে পরিবারেই এখন পরিবর্তনে ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। চলতি বছরের ২২ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের গা ঘেঁষা সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুরে তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসিত করা হয়। তাদের ঘরে ঘরে ঘরে গিয়ে দেখা যায়, এখন আর সেই জরাজীর্ণ পরিবেশ নেই। ঘরের ভেতর রয়েছে নান্দনিক আসবাবপত্র। মাথার উপর ঘুরছে পাখা। প্রতিটি ঘরের সামনেই দেখা মিলে আধুনিক সোলারের। এখনো পর্যন্ত সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগ না পেলেও সোলার ও ব্যাটারীর মাধ্যমেই তারা বিদ্যুতের চাহিদা মেটাচ্ছে।
উপকারভোগীরা জানিয়েছেন, ঘর পেয়ে যাযাবরের মত ঘুরে ঘুরে জীবন কাটানোর পরিবেশটা এখন বদলেছে। এখন তারা ভাল আছেন।
তারা বলেন, অন্যান্য বছর জীবনে ঈদ এলেও এবারের ঈদ আনন্দটা ভিন্ন। এবার তারা নিজ ঘরে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে ঈদ পালন করবে। ঘরেও রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। শুধু তাই নয় তারা তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করে সমাজের মূলশ্রোত ধারায় ফিরতে আগ্রহী। এজন্য দ্রুত সরকারি বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। তাদের প্রত্যাশা মানবেতর জীবন যাপন করা অবশিষ্ট বেদে পরিবারগুলোকেও পুনর্বাসিত করে সমাজের মূলশ্রোত ধারায় ফিরিয়ে আনা হবে।
বেদে মোঃ দুলাল জানান, সরকারের মাধ্যমে ঘর পেয়ে আমরা ভাল আছি। তবে প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের কষ্ট হচ্ছে। জীবনে বহু কষ্ট করেছি এখন আর কষ্ট করতে চাইনা। আমরা চাই আমাদের সন্তানরা শিক্ষিত হয়ে স্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে উঠুক। এই বেদে জীবন থেকে তারা নতুন জীবনে ফিরে আসুক।
বেদে সর্দার লালন জানান, নৌকা আর ঝোঁপঝাড়ের মধ্যেই তাদের জীবন কেটেছে। জীবেন বহু ঈদ এসেছে কিন্তু আনন্দটা ছিলো ফিকে। কিন্তু এবারের ঈদে নিজের ঘরে অনেক আনন্দে ঈদ করবেন তারা। তিনি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আরও বলেন, বহু স্থানের বেদে সম্প্রদায়ের আরো অনেক পরিবার রয়েছে। তাদেরকেও যদি আশ্রয়ণের আওতায় নিয়ে আসা হয় তাহলে তারাও সমাজের মূল শ্রোতধারায় ফিরতে পারত।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে বেদে পরিবারগুলোকে নাগরিকত্ব কার্ড ও ভোটার করে তাদেরকে ঘর দেয়া হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পটি তিতাস নদীর তীরে হওয়ায় তাদেরকে সদর উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মৎস্য আহরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে শীঘ্রই সরকারের পক্ষ থেকে মাছ ধরার জালসহ প্রয়োজনীয় সরাঞ্জাম দেয়া হবে। এছাড়াও আশ্রয়ণ কেন্দ্রিক সমবায় থেকে শুরু করে যুব উন্নয়ন, আনসার-ভিডিপির প্রশিক্ষণেও যাতে তাদের প্রশিক্ষিত করতে এগিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে কাজ চলছে। যদি ভাসমান আরও বেদে পরিবার থাকে তাহলে তাদেরকেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।