নিউজ ডেস্ক,
একাধিক মাদক, ডাকাতি ও ছিনতাই মামলার আসামী হাবিব মিয়ার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরীহ লোকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজী ও মারধর করার দায়ে অভিযোগ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে মাদকের চোরকারবারি খ্যাত হাবিব মিয়া ক্রমেই বেপরোয়া আর অদম্য হয়ে উঠেছেন। সিঙ্গারবিল ছাড়িয়ে তিনি এখন জেলা শহরের মহাসড়কেও ডাকাতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে থাকেন। চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসাই হাবিব মিয়ার অদম্য নেশা।
জেলার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল গ্রামের মৃত এলু মিয়ার ছেলে হাবিব মিয়ার মারধরে আহত ও জীবনের নিরাপত্তায় ভীত সন্ত্রস্ত্র হয়ে আদালতে অভিযোগ দাখিল করেছেন একই গ্রামের লালা বাড়ির মৃত হরেন্দ্র চন্দ্র লালা (অব. উপ-পরিদর্শক) এর ছেলে তাপস চন্দ্র লালা।
এই অভিযোগে হাবিব মিয়াসহ ৪ জনের নামোল্লেখ করে আরো ৪/৫ জনকে গং বিবাদী করা হয়েছে। অন্যান্য বিবাদীরা হলেন- সিঙ্গারবিল গ্রামের ইকবাল মিয়া, কাসেম মিয়া, জুয়েল মিয়া। দায়েরকৃত অভিযোগটি আমলে নিয়ে আদালত জেলার বিজয়নগর থানা পুলিশকে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতে দাখিল করা অভিযোগ ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হাবিব মিয়া স্থানীয়ভাবে প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে প্রায়শই সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে এলাকায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করে রাখে। একইভাবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সিঙ্গারবিল গ্রামের তাপস চন্দ্র লালার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে হাবিব গং। এ সময় হুমকি দেয়া হয়- চাঁদা না দিয়ে এখানে ব্যবসা করা যাবে না। তাপস চন্দ্র চাঁদা না দিলে হাবিব গং অন্যান্য বিবাদীদেরকে সাথে নিয়ে চলতি বছরের ২৬ জুলাই রাত ৯টার দিকে তাপস ব্যবসায়িক কার্যক্রম শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির পাশে লালা পুকুরের দক্ষিণপাড়া বিবাদীরা একজোট হয়ে লোহার রড ও লাঠি নিয়ে অতর্কিত হামলা করে।
এ সময় তাপস চন্দ্র কোনোরকমে পালিয়ে বেঁচে বাড়িতে এসে পূর্বভিটির ঘরে আশ্রয় নেন। সেখানেও হাবিব গং তাপস চন্দ্রকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। হামলায় তাপসের মাথা, মুখ, ঠোঁটসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পান। স্থানীয় প্রতিবেশীদের সহায়তায় সে যাত্রা রক্ষা পেলেও তাপস চন্দ্র লালা হামলার সময় হাবিব মিয়া গং তাপসের ঘরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ষিত নগদ ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, ১ ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায়। হামলাকারীরা ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্রও ভাংচুর করে অনুমান ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি করে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাবিব মিয়া মাদক কারবারি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের একাধিক পরোয়ানা রয়েছে বলে বিজয়নগর থানা সূত্রে জানা গেছে। রেকর্ডপত্র অনুযায়ী হাবিব মিয়ার বিরুদ্ধে বিজয়নগর থানায় ২০১৫ সনে দুইটি ও ২০১৮ সনে একটি মাদক মামলা রয়েছে। এছাড়া ২০২১ সনে দুইটি জিডিও দায়ের হয়েছে।
এসব মামলায় একাধিকবার গ্রেফতারও হয়েছেন হাবিব। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ে হাবিব মিয়ার অন্যতম সহযোগী আলামিনের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। আলামিনের সাথে যোগসাজশে হাবিব মিয়া প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে নির্বিঘেœ মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে স্থানীয় অভিযোগ করেছেন।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের মে মাসের ২০ তারিখ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার শেরপুরে যানবাহনে ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়ার সময় সদর থানা পুলিশ হাবিব মিয়াসহ আরো ১ জনকে গ্রেফতার করে। এ সময় হাবিব মিয়ার কাছ থেকে ডাকাতি করার সরঞ্জামাদিসহ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায়ও সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে।
এ মামলায় আদালতের নিকট আসামী সোপর্দকরণ পুলিশী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- হাবিব মিয়া একজন পেশাদার ডাকাত ও ছিনতাইকারী প্রকৃতির লোক। একইসাথে হাবিব আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তার বৈধ কোনো পেশা নাই। হাবিব মিয়া ডাকাতদলের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সংঘবদ্ধভাবে ডাকাতি ছিনতাইসহ মাদক কারবারিতে লিপ্ত থাকার প্রমাণ রয়েছে।
সিঙ্গারবিল গ্রামের তাপস চন্দ্র পাল পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট হাবিব মিয়া গংদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে এলাকার সংখ্যালঘুসহ সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এছাড়া বিজয়নগরের সিঙ্গারবিলকে মাদকমুক্ত করতে হলে হাবিব মিয়ার পাশাপাশি তার সহযোগী আলামিনকেও আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি এই প্রতিবেদককে বলেন- হাবিব মিয়া ও আলামিন অভিনব কায়দায় প্রশাসনের চোখে ধুলো দিচ্ছে। তারা প্রশাসনের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন।