নিউজ ডেস্ক,
কামিল মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে ফাজিল কিংবা কামিল মাদ্রাসায় ১২ বছরের অভিজ্ঞতা শর্ত পূরনের জন্য আলিম মাদ্রাসাকে ফাজিল বানিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন নিয়েছেন মো. নুরুল ইসলাম নামে এক মাদ্রসা শিক্ষক। জাল কাগজপত্র দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা কামিল মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষ নিয়োগ পেয়ে রাম রাজত্ব কায়েম করে যাচ্ছেন। উপাধ্যক্ষ হিসেবে ইতোমধ্যে পার করেছেন প্রায় ১০ বছর। সম্প্রতি কাগজপত্র দেখতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির। পরে বিষয়টি নিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর মোঃ নুরুল ইসলামের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ।
মাদ্রাসার আইডি ব্যক্তিগত ব্যবহার, সহকর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ, শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ, মাদ্রাসার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করা, অন্য মাদ্রাসাকে প্রধান্য দেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে দুইবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলে সব দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চান উপাধ্যক্ষ মো. নুরুল ইসলাম।
অভিযোগ ও মাদ্রাসা সংম্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাওলানা মোঃ নুরুল ইসলাম ২০০৬ সালের ২১ জানুয়ারি আড়াইসিধা কামিল মাদ্রাসায় প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১৩ সালে তিনি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের জারীকৃত, বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্টান এর জনবল কাঠামো নির্দেশিকা (৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ এ প্রেণীত মার্চ ২০১৩ সংশোধিত) এর আলোকে মাদ্রাসার উপাদ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভ করেন। এই নির্দেশিকা মোতাবেক নিয়োগকালীন সময়ে অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে আরবি বিষয়ে কামিল অথবা ফাজিল মাদ্রাসায় ১২ বছরের অভিজ্ঞতা। কিন্তু ২০০৬ সালে আড়াইসিধা কামিল মাদ্রসায় যোগদানের কারনে তার কামিল কিংবা ফাজিল মাদ্রাসার অভিজ্ঞতা ছিল মাত্র ৮ বছরের। কিন্তু কামিল মাদ্রসার উপাধ্যক্ষ পদে আবেদন করার চাহিত ফাজিল কিংবা কামিল পর্যায়ে তার অভিজ্ঞতা ১২ বছরের না থাকায় তিনি শর্ত পূরনের জন্য জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।
নুরুল ইসলাম তার ৪ বছরের অভিজ্ঞতা কমের শর্ত পূরনের জন্য তথ্য গোপন করে এবং জেলার মেহারী ওবায়দিয়া আলিম মাদ্রাসাকে ফাজিল মাদ্রাসা বানিয়ে একটি প্যাড ব্যবহার করে ৫ বছর ১১ মাসের অভিজ্ঞতা দেখান। কিন্তু জেলার কসবায় অবস্থিত মেহারী ওবায়দিয়া আলিম মাদ্রাসাটি বর্তমানেও আলিম মাদ্রাসা হিসেবেই এমপিওতে তালিকা ভুক্ত। নূরুল ইসলাম যখন ওই মাদ্রাসা থেকে অভিজ্ঞতার সনদ নেন তখনও মাদ্রাসাটি আলিম হিসেবেই এমপিও ভুক্ত ছিল। কিন্তু মেহারী ওবায়দিয়া আলিম মাদ্রাসার প্যাডকে জাল করে ও তথ্য গোপন করে নিজ হাতে তিনি মেহারী ওবায়দিয়া আলিম মাদ্রাসাকে মেহারী ওবায়দিয়া ফাজিল মাদ্রাসা দেখান। সেখানে তিনি ২০০২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি যোগদান ও ২০০৬ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫ বছর ১১ মাস অভিজ্ঞতা দেখান। সেখানে আলিম প্রভাষক হিসেবে ছিলেন।
এদিকে অভিজ্ঞতা সনদে ব্যবহার করা প্যাডের উপরে মেহারী ওবায়দিয়া ফাজিল মাদ্রাসা লেখা থাকলেও অধ্যক্ষের স্বাক্ষরের নিচের সিলে মেহারী ওবায়দিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা ও উপরের গোল সিলে মেহারী ওবায়দিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা লেখা আছে। পাশাপাশি অভিজ্ঞতা প্রমান করার জন্য যে এমপিও শিট প্রদান করেন সেখানে মাদ্রাসাটিকে আলিম হিসেবে লেখা আছে। বর্তমানেও মাদ্রাসাটির এমপিও শিটে দেখা যায় আলিম মাদ্রাসা লেখা আছে।
এদিকে গত ১২ আগষ্ট এসব বিষয়ে মাদ্রাসায় একটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক ও এলাকাবাসী উপস্থিত হয়। সেখানে নুরুল ইসলামের নানান অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, মাদ্রাসার আইডি ব্যক্তিগত ব্যবহার, সহকর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ, শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ, মাদ্রাসার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করা, অন্য মাদ্রাসাকে প্রধান্য দেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠে আসে তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে সাবেক অধ্যক্ষ আবু বকর মোঃ সিদ্দিকুর রহমান দুইবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে সব দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চান নুরুল ইসলাম। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মাদ্রাসার সকল শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা অনাস্থা দেন।
বিষয়টি নজরে আসলে আড়াইসিধা কামিল মাদ্রাসার সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ আজহারুল ইসলাম ভূইয়া মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর মো. নুরুল ইসলাম এর বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার অভিযোগ দাখিল করেন।
মেহারী ওবায়দিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম খান ফারুকী বলেন, আমাদের এই মাদ্রাসাটি বর্তমানে আলিম মাদ্রাসা। এটি শুরু থেকে আলিম ছিল। অন্য বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জেনে জানাবেন বলে পরে কল করতে বলেন। এরপর ওনার মোবাইল ফোনে বার বার কল করা হলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।
আড়াইসিধা কামিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি আলহাজ্ব মোঃ আজহারুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আবু বকর মোঃ সিদ্দিকুর রহমান উপাধ্যক্ষ মোঃ নুরুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। নোটিশের জবাবে তিনি সব দোষ স্বীকার করে নেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মাদ্রাসার সকল শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা অনাস্থা দেন। সবকিছু যাচাই করতে গিয়ে তার জাল অভিজ্ঞতা সনদের বিষয়টি সামনে আসে। পরে আমি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ দাখিল করি। বিষয়টির সুষ্টু সমাধান আশা করি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আড়াইসিধা কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনেই আমি চাকরী পেয়েছি ও চাকরী করছি। আমার সম্মান হানি করার জন্য একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। অযাযিত মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্যেশ্যমূলকভাবে একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে এসব করছে। আমি কোন অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত না। আমি ন্যায়বিচার চাই।
এই বিষয়ে জানতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবু নঈম এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে বিষয়টি তদন্তাধীন আছে বলে জানান। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে জিআরএস এ তথ্য পাওয়ার জন্য আবেদন করতে বলেন।