স্টাফ রিপোর্টার:
প্রায় ১৩ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি হাসপাতাল থেকে হারিয়ে যান শায়েস্তারা বেগম (৫১)। স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর কোনো সন্ধান পাননি। অবশেষে স্বজনদের ফিরে পেয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব শায়েস্তারা। শুক্রবার (১২ মার্চ) দুপুর ১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরেন তিনি। সমীর কুমার মজুমদার (৩৩) নামে আরেক ব্যক্তিও ভারত থেকে নিজ দেশে ফিরেছেন মানবাধিকারকর্মী সৈয়দ খায়রুল আলমের প্রচেষ্টায়। ধারণা করা হচ্ছে- তাঁরা মানবপাচারের শিকার হয়ে ভারতে যান। মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাঁদেরকে আদালতের নির্দেশে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার মডার্ণ সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চেকপোস্টে আগরতলাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনার মো. জোবায়েদ হোসেন তাঁদেরকে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নূরে আলমের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর তাঁদেরকে নিজ নিজ পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়।
শায়েস্তারা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার দেলী গ্রামের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। আর সমীর কুমার মজুমদার ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার ঝুমারকান্দা গ্রামের শশধর মজুমদারের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা আগরতলার মডার্ণ সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে চিকাৎসাধীন ছিলেন তাঁরা। পরবর্তীতে মানবাধিকারকর্মী খায়রুল আলমের মাধ্যমে তাঁদের সন্ধান পান পরিবারের সদস্যরা।
দীর্ঘদিন পর নিজ দেশে ফিরে স্বজনদের কাছে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন শায়েস্তারা ও সমীর। দুজনেই মানবাধিকারকর্মী খায়রুল ও দুইদেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
শায়েস্তারা বেগমের ভাই জয়নাল আবেদীন জানান, শায়েস্তারা বেগম মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন। প্রায় ১৩ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হন তিনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর কোনো সন্ধান মিলেনি। গত দুই বছর আগে মানবাধিকারকর্মী খায়রুল আলমের মাধ্যমে শায়েস্তারা বেগমের খোঁজ পান। দীর্ঘদিন পর বোনকে পেয়ে আপ্লুত জয়নাল দুই দেশের সরকার ও মানবাধিকারকর্মী খায়রুলকে ধন্যবাদ জানান।
সমীর কুমার মজুমদারের ছোটভাই অমীর মজুমদার জানান, ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন সমীর। তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন। দেড় বছর আগে জানতে পারেন তাঁর ভাই আগরতলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ভাইকে ফিরে পেয়ে অনেক আনন্দিত বলে জানান তিনি।
মানবাধিকারকর্মী সৈয়দ খায়রুল আলম বলেন, আমি আমার নিজ এলাকার (নড়াইল) একটি মেয়েকে খুঁজতে আগরতলার মডার্ণ সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে যাই। সেখানে গিয়ে সমীর ও শায়েস্তারার খোঁজ পাই। পরবর্তীতে তাদের ঠিকানা জোগাড় করর স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করি। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে দুই দেশের হাই কমিশন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সহযোগীতায় অবশেষে তাঁদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি নিজেও অনেক আনন্দিত।
আগরতলাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনার মো জোবায়েদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ২৪ জন বাংলাদেশি আগরতলার মডার্ণ সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁরা কীভাবে ভারতে এসেছেন- সেটি জানা যায়নি। তাঁরা বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরাফেরা করার সময় পুলিশ তাঁদের আটক করে। পরবর্তীতে মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাঁদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে দুইজনকে হাসপাতাল ছাড়পত্র দেয়ায় সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে স্বজনদের কাছে তুলে দেয়া হয়েছে।