স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভুল চিকিৎসায় স্কুল শিক্ষিকা নওশিন আহমেদ দিয়ার মৃত্যুর অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলোচিত চিকিৎসক ডিউক চৌধুরীসহ তিন চিকিৎসককে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ডিউক চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মুন্সেফপাড়ায় অবস্থিত খ্রিস্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালের মালিক।
বুধবার(০১ জানুয়ারি) বিকেলে চিকিৎসক ডিউক চৌধুরী, তার মালিকানাধীন হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ও মামলার আসামি অরুনেশ্বর পাল অভি ও শাহাদাত হোসেন রাসেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ সফিউল আজম এর আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে উচ্চ আদালত থেকে নেয়া চার সপ্তাহের জামিন শেষে গত ১৮ ডিসেম্বর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন ডাঃ ডিউক ও অপর দুই চিকিৎসক। তখন অবকাশকালীন বিচারক মোঃ হাসানুল ইসলাম মামলাটি অধিকতর শুনানীর জন্য ১ জানুয়ারী ধার্য্য করেন। বুধবার সকালে ধার্য তারিখে ওই তিন চিকিৎসক আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। দুই দফায় জামিন আবেদনের ওপর শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। শুনানী শেষে বিজ্ঞ বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তিনজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত জানান, মামলার তিন আসামি উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক গত ১৮ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেছিলেন।পরে অবকাশকালীন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জামিন না দিয়ে মামলার অধিকতর শুনানীর জন্য ১ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য্য করেন। গতকাল বুধবার অধিকতর শুনানী শেষ বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী শাহ পরান বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো।
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর প্রসবজনিত বেদনা নিয়ে পৌর এলাকার মুন্সেফপাড়ার ক্রিসেন্ট কিন্ডার গার্টেনের সহকারী শিক্ষিকা নওশিন আহমেদ দিয়া একই এলাকার ডাঃ ডিউক চৌধুরীর মালিকানাধীন খ্রিস্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার আগাম প্রসবের ব্যবস্থা করা হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দিয়া একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ্য হওয়ার আগেই দিয়াকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। পরবর্তীতে ৪ নভেম্বর ভোরে দিয়ার প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হলে তাকে আবারও খ্রিস্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেয়া হয়। তখন ডিউক চৌধুরী, অরুনেশ্বর পাল অভি ও মো. শাহাদাত হোসেন রাসেল “ভুল ইনজেকশন এবং ওষুধ” প্রয়োগ করার পর দিয়া অজ্ঞান হয়ে যান। এ সময় দিয়ার স্বজনরা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ডাকতে বললে ডিউক ও বাকি দুই চিকিৎসক চুপ থাকেন।
এক পর্যায়ে দিয়ার মৃত্যু হলেও তার মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে ওইদিন দুপুর একটার দিকে দ্রুত তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলেন। এরপর অ্যাম্বুলেন্সে করে দিয়াকে নিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে পৌঁছানোর পর সেখানে চিকিৎসকরা কয়েক ঘণ্টা আগেই দিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান। এ ঘটনায় দিয়ার পিতা শিহাব আহমেদ গেন্দু বাদি হয়ে ওই তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গত ১৩ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।