আখাউড়া প্রতিনিধি:
মুক্তিযুদ্ধ সত্যিকার অর্থেই ছিল এক জনযুদ্ধ, যে যুদ্ধে পেশাদার সৈনিকদের একটি অংশ যেমন অংশ গ্রহন করেছিল, একই সঙ্গে অংশ-গ্রহন করেছিল সমাজের প্রতিটি স্তরের, প্রতিটি পেশা ও শ্রেণির মানুষ। সে কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কোনো প্রচলিত যুদ্ধ’ বা প্রথাগত যুদ্ধ নয়। এটি ছিল জাতীয় স্বাধীনতার লক্ষ্যে একটি বিস্তৃত জনযুদ্ধ, যার প্রাণশক্তি ছিল গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ। পেশাদার সৈনিকদের মধ্যে ৪৭৭ কনেষ্টবল সিদ্দিকুর রহমান একজন, যিনি তাঁর জীবনের সবটুকু দিয়ে, তাঁর সকল সাধ্যে,এই যুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন।
খোদেজা বেগম জানান, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে তিনি তার স্বামী ছিদ্দিকুর রহমনের সাথে দাম পাড়া পুলিশ লাইন্সের সরকারি বাসায় বসবাস করতেন। তখন তিনি ছয় সন্তানের জননী ছিলেন। অনুমান ২৭/০৩/১৯৭১খ্রিঃ তারিখ তার স্বামী রাত অনুমান ১ ঘটিকার সময় দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে ম্যাগজিন গার্ড ডিউটিতে কর্মরত ছিলেন। বর্বর হানাদার পাক বাহিনীর সৈনরা আক্রমন চালালে উক্ত আক্রমন প্রতিহত করার জন্য গুলাগুলি শুরু হয়। পুলিশ বাহিনী পিছু হটাতে বাধ্য হয়।
উভয় পক্ষের গুলাগুলি বন্ধ হলে পুলিশ লাইন্সের বাহির হয়ে খোদেজা বেগম তার পাশের বাসায় বসবাস কারি দুই পুলিশ কনস্টেবলের লাশ দেখতে পান। তখন তিনি তার স্বামীর সন্ধান করতে থাকেন। স্বামীকে না পেয়ে চট্রগ্রাম শহরে বসবাস কারী তার দেবরকে সংঙ্গে নিয়ে ছয় সন্তান সহ অজানার উদ্দ্যেশ্য ২৮/০৩/১৯৭১তারিখে দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের সরকারি বাসা হতে বের হয়ে যান।
এক মাস বহু কষ্টে কোথাও হেটে কোথাও রিক্সা করে মানুষের বাড়িতে থেকে অনেক কষ্টে ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় চার পাড়া শরনার্থী শিবিরে আত্মীয় স্বজনের নিকট খোদেজা বেগম ও তার দেবর এবং ছয় সন্তান সহ আশ্রয় নেয়। এবং তার স্বামীর খোজ খবর নিতে থাকেন।
অনেক খোজা খোজির পর মোগড়া ইউনিয়ন আ’লীগের আবুল হাসেম ভুইয়ার নিকট জানতে পারেন যে, তার স্বামী ছিদ্দিকুর রহমান আগরতলায় কৃষ্ণনগর গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী জোনাল অফিস ,ইস্টান জোন ২ এর কার্যালয়ের তৎকালিন সভা প্রতি জনাব জহুর আহম্মদ চৌধুরীর কার্যালয়ে তৎকালীন পুলিশ সুপার জনাব এম আর তালুকদারের অধীনে কৃষ্ণনগর কার্যালয়ে মুক্তি যোদ্ধে যোগদান করে কর্মরত অবস্থায় আছেন। এমন খবরে খোদেজা বেগম সেখানে য়ায়। এবং তার স্বামী ছিদ্দিকুর রহমানের সাথে দেখা করেন।
তিনি জানান যে,তার স্বামী প্রয়াত কনস্টেবল /৪৭৭ চিদ্দিকুর রহমান একজন প্রকৃত মুক্তি যোদ্ধা ছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তার স্বামীকে চাকুরি হতে বরখাস্ত করেছিলেন। তারপর তার স্বামী ২নং ইস্টার্ন জোন এর সভাপ্রতি জনাব জহুর আহাম¥দ চৌধুরী এর স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র জমা দিয়ে পুনরায় চাকুরিতে যোগদান করেন। বিষয়টি তার স্বামীর চাকুরির খতিয়ান বহিতে কোড করা হয়।
খোদেজা বেগম তার স্বামীর মৃত্যর পর, স্বামীর পেনশন তার নিজ নামে করার সময় চট্রগ্রাম জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার ,মরহুম মোঃ জেড এ মোরশেদ ,পিপিএম মহোদয় ও ছিদ্দিকুর রহমানের সার্ভিস বহি পর্যালোচনা করে অর্ডার সীট ও চিঠিতে কনস্টেবল/৪৭৭ মৃত ছিদ্দিকুর রহমানকে বীর মুক্তিযোদ্ধা উলেখ্য করে চিঠি পাঠিয়েছেন। তারপরও আমার স্বামী কনস্টেবল/৪৭৭ মৃত ছিদ্দিকুর রহমানের নাম পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট অন্তভুক্ত হয়নি ।
খোদেজা বেগম বলেন, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের আইন ,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ সচিবালয়,ঢাকা বরাবর তার স্বামীর নাম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা গেজেট প্রকাশ করতে আইনতঃ আদেশ পাওয়ার নিমিত্তে একখানা আবেদন দাখিল করেন। তার স্বামী মহান স্বাধীনতা যোদ্ধের পূর্বে চট্রগ্রাম জেলা পুলিশ লাইন্সে ৪৭৭ নং কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন । তিনি তার আবেদনে আরো জানান যে, তার স্বামীর নাম পুলিশ মুক্তি যোদ্ধা গেজেট অর্ন্তভূক্তির জন্য তিনি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)তে ইন্টার নেটে আবেদন করেন।
এই সুবাদে আখাউড়া মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটিতে হাজির হলে তারা খোদেজা বেগমকে বিভাগীয় কতৃপক্ষ অর্থাৎ বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের মাধ্যমে পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে নাম প্রকাশের আবেদন করার জন্য মৌখিকভাবে পরামর্শ দেন। পরে খোদেজা বেগম তার স্বামীর নাম পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট অন্তভুক্তি নিমিত্তে আবেদন দাখিল করেন।
পরে অনুসন্ধান কমিটি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল মহম্মদ আতাউল গনী ওসমানী কর্তৃক স্বাক্ষরিত স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র পর্যালোচনা করেন। পর্যালচনায় দেখা যায় যে, ছিদ্দিকুর রহমান ,পিতা মৃত রেহান উদ্দিন ভূইয়া ,গ্রাম নীলঅখাদ ,থানা কসবা ,জেলা কুমিল্লা এর নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সৈনিক উল্লেখ করে প্রত্যায়ন প্রদান করা হয়। উক্ত সনদ পত্রে স্বাধীনতা যুদ্ধে ছিদ্দিকুর রহমান ২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন মর্মে উল্লেখ করা হয়।