এনবি প্রতিনিধিঃ
‘হয় আপোষ করো, না হয় মরো’- একমাত্র মেয়ের হত্যা মামলা তুলে নিতে এভাবেই এক বাবাকে হুমকি দিচ্ছে আসামি পক্ষের লোকজন। বুকে ব্যানার নিয়ে একাই দাঁড়ালেন বাবা। মেয়ে হত্যার বিচার চান তিনি। ব্যানারে লেখা, ‘আমার একমাত্র মেয়ে হত্যার বিচার চাই এবং আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই। এভাবেই কন্যার হত্যার বিচার চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছে অসহায় পিতা মফিজুল হক।
আজ বুধবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে একাই ব্যানার নিয়ে দাড়িয়ে কন্যা হত্যার সর্বোচ্চ বিচার দাবী করেন তিনি। মেয়ে কামরুন্নাহার তুর্ণার হত্যার বিচার ও নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বুধবার দুপুর ১২টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ মফিজুল হক। তুর্ণার ছবি সংবলিত একটি ব্যানার গলায় ঝুলিয়ে একাই অবস্থান নেন তিনি। মৃত্যুর আগে মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যাওয়ার আকুতি জানান এই অসহায় বাবা।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, ২০১২ সালে তার একমাত্র কন্যা জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার চরচারতলা গ্রামের কামরুন্নাহার তূর্ণার সাথে তার চাচাতো ভাই আরিফুল হক রনির বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই রনি তার স্ত্রী তূর্ণাকে নির্যাতন করত। এরই এক পর্যায়ে ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল আশুগঞ্জের চর চারতলা গ্রামে শ্বশুরবাড়ির পরিত্যক্ত পানির ট্যাংক থেকে কামরুন্নাহার তূর্ণার (২৮) হাত-মুখ বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তূর্ণা ছিলেন তিন মাসের অন্তসত্ত্বা। তার একটি মেয়েও আছে।
এ ঘটনায় তুর্ণার স্বামী রনিকে আসামি করে ২৫ এপ্রিল আশুগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন মফিজুল হক। পরে ওই বছরের ২১ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক রনিকে কারগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে জামিনে কারামুক্ত হন রনি। ইতোমধ্যে আদালতে হত্যা মামলা অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এরপর থেকেই মামলা তুলে নিয়ে আপোষ করার জন্য তুর্ণার বাবা মফিজুল হককে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন রনি ও তাঁর পরিবারের লোকজন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মফিজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আসামি পক্ষের লোকজন আমাকে বারবার হুমকি দিচ্ছে আপোষ না করলে আমাকে মেরে ফেলবে। আমার তো কোনো ওয়ারিশ নেই, তাই আমাকে হত্যা করেলে আমার বিচার চাওয়ারও কেউ নাই। সেজন্য আমাকে এলাকার সর্দারদের দিয়ে চাপ দিচ্ছে মামলা তুলে নিতে। আমি একা অহসায় অবস্থায় আছি, আমার কেউ নেই। আমি বিপদে আছি। আমার মেয়ের হত্যার বিচার যেন হয়, আসামির যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপাপ্ত পুলিশ সুপার) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, মফিজুল হক তাঁকে হুমকি দেয়ার কোনো অভিযোগ থানায় করেছেন কিনা সেটি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ করে থাকলে বিষয়টি তদন্ত করে বিয়ষটি আদালতকে জানানো হবে।