এনবি নিউজঃ
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। খবর পেয়ে অনেকেই ছুটে যান তার পৈতৃক নিবাসে।
রবিবার বাদ জোহর স্থানীয় নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাযার পর দক্ষিণ মৌড়াইল কবরস্থানে তার লাশ সমাহিত করা হবে।
এর আগে গত শুক্রবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি আল আল মাহমুদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মৌড়াইল গ্রামের মোল্লাবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন সোনালী কাবিনের কবি আল মাহমুদ। তাঁর পিতার নাম মীর আবদুর রউফ লিল মিয়া। তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন। আল মাহমুদের প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। স্থানীয়দের কাছে পিয়ারু মিয়া নামেই পরিচিত ছিলেন কবি আল মাহমুদ।
আল মাহমুদের ৫ ভাই-বোনের মধ্যে দুই বোন বর্তমানে জীবিত আছেন। তার ছোট ভাই মীর ফরহাদ হোসেন মারা গেছেন গত চার মাস আগে।
স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণ মৌড়াইলে আল মাহমুদের পৈতৃক ভিটা আছে, কিন্তু নিজের কোনো ঘর নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে আল-মাহমুদ ঢাকায় থাকার কারনে মাঝে-মধ্যে অল্প সময়ের জন্য পৈত্রিক নিবাসে আসতেন। যখনই আসতেন প্রয়াত ছোট ভাই মীর ফরহাদ হোসেনের বাসায়ই উঠতেন। তবে গত ৬/৭ বছরে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেননি আর।
গতকাল শনিবার সকালে কবি আল মাহমুদের বাড়িতে গেলে তার ভাতিজা মীর রব্বান হোসেন বলেন, কাকা মাঝে-মাঝে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আসলেও নিজ পৈতৃক ভিটাতে থাকেননি প্রায় এক যুগের বেশি সময়। অসুস্থতাজনিত কারণে গত কয়েক বছর ধরে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেননি।
তিনি বলেন, কাকা বাড়িতে আসলে তার ভক্ত ও শুভাকাঙ্খীদের ভীড় লেগে থাকত। তাদের সাথে গল্প-গুজব করে ও অনেক সময় বাড়ির সামনের পুকুরে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করে সময় কাটাতেন তিনি।
আল-মাহমুদের আরেক ভাতিজা মীর আকরাম বলেন, অসুস্থতার কারনে গত ৬/৭ বছর ধরে বাড়িতে আসেননি কাকা। তিনি বলেন, আল মাহমুদের পৈতৃক ভিটায় আগের দিনের একটি চৌ-চালা ঘর ছিল। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসলে ওই ঘরেই থাকতেন। তিনি বলেন, আল মাহমুদকে স্থানীয়রা পিয়ারু মিয়া বলে ডাকতেন। আকরাম জানান, আগামীকাল (রবিবার) বাদ জোহর স্থানীয় নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাযা শেষে দক্ষিণ মৌড়াইল কবরস্থানে তার লাশ সমাহিত করা হবে। তিনি বলেন, শনিবার দুপুর থেকে নামাজে জানাযার ব্যাপারে শহরে মাইকিং করা শুরু হয়েছে। শনিবার বিকেলে কবি আল-মাহমুদের লাশ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন তার স্বজনেরা।
আল মাহমুদের স্মৃতিচারণ করে তার ভাগ্নে ও বাল্যবন্ধু এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গবেষক মুহম্মদ মুসা বলেন, ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল আল-মাহমুদের। যেখানেই যেতেন শুধু বই পড়তেন। আল মাহমুদ কখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসলে আমার সাথেই বেশী সময় কাটাতেন। মামার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে মুহম্মদ মুসা বলেন, কবি আল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। অনেকেই আল মাহমুদের বইয়ের উপর ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন বলেন, আল মাহমুদ শক্তিশালী লেখক ছিলেন। কিন্তু তিনি মাঝে মাঝে শক্তির অপচয়ও করেছেন। তা না হলে বাংলা সাহিত্য তার কাছ থেকে আর অনেক কিছুই পেত।