Advertisement

আশুগঞ্জে ইউএনও’র সামনেই ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাদানুবাদ

NewsBrahmanbaria

এই আর্টিকেল টি ১১১৮।

আশুগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সীর বাদানুবাদ ও কথা কাটাকাটি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঙ্গলবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে উপজেলা পরিষদে এ ঘটনা ঘটে।

ইউপি চেয়ারম্যানদের ভাষ্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সী তাদেরকে অপমান ও তার ভাতিজা মারতে উদ্যত হয়েছিল। এডিপির প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়েই তাদের সাথে হানিফ মুন্সীর কথা কাটাকাটি হয়। হানিফ মুন্সীর ভাষ্য, ইউপি চেয়ারম্যানরা এডিপির ৮০ শতাংশ বরাদ্দ চাইছিলেন। আর তার ভাতিজা কাউকে মারতে যায়নি।

ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিমুল হায়দারের কক্ষে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) রাজস্ব বরাদ্দ নিয়ে যাচাই-বাছাইয়ে কমিটি ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। যাচাই-বাছাইয়ে ইউএনও নাজিমুল হায়দার, উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সী, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম পারভেজ এবং উপজেলার আড়াইসিধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম, দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল করিম খান, তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সামা, তারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস হাসান,
শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফউদ্দিন চৌধুরী, সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিনের পক্ষে ইউপি সদস্য হেলাল মিয়া ও চর-চারতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পক্ষে একজন প্যানাল চেয়ারম্যান ও লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পক্ষে প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ সায়েম উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রত্যেক ইউনিয়ন থেকে প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডিপির রাজস্ব বরাদ্দ পেতে প্রকল্প জমা দেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় আশুগঞ্জসহ নয়টি উপজেলা রয়েছে। সভায় আশুগঞ্জ বাদে বাকি আটটি উপজেলায় যেভাবে এডিপির প্রকল্পের বরাদ্দের বিভাজন হয়েছে সেভাবে বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব করেন ইউপি চেয়ারম্যানরা। আয়তন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ধাপওয়ারি একটি পরিমান টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন ইউপি চেয়ারম্যানরা। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সী একমত হতে পারেননি। যাচাই-বাছাইয়ে ভিজিএফ কার্ড বন্টনের সময় পূর্বে বিতরণ করা নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে ৫০টি করে কার্ড কম দেওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানরা ইউএনও’র কাছ থেকে লিখিত স্মারক চান। লিখিত স্মারক না দিলে ভিজিএফ কার্ডের সংখ্যা কমাতে পারবেন না বলে ইউপি চেয়ারম্যানরা সভায় বলেন। এতে হানিফ মুন্সী রাগান্বিত হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে ইউএনও সামনেই টেবিলে থাপ্পর দিয়ে চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্যে কর্কশ ভাষায় কথা বলেন। এরপর ইউপি চেয়ারম্যানরা কক্ষ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় হানিফ মুন্সীর ভাতিজা মো. পায়েল আড়াইসিধার ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেলিমসহ বাকিদের মারতে উদ্যত হন।

আড়াইসিধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম বলেন, ইউএনও’র সামনেই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এক পর্যায়ে আমাদেরকে অপমানিত করেন হানিফ মুন্সী। চেয়ারম্যানের ভাতিজা পায়েল চেয়ারম্যানদের মেরে ফেলবে বলে মারতে তেড়ে আসেন। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নয়টির মধ্যে আটটি উপজেলায় এডিপির বরাদ্দ থেকে ২০শতাংশ রাজস্ব উপজেলা প্রশাসন পরিষদ রেখে দেয়। আর বাকি ৮০শতাংশ বরাদ্দ উপজেলার জনসংখ্যা ও আয়তনের ভিত্তিতে বিভাজন করে। এবার এটি না করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এখন আইনের কথা বলছেন। তিনি বলেন, জেলার অন্যান্য উপজেলায় যেভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেইভাবে বরাদ্দ দেওয়ার কথা বললেই তিনি ক্ষেপে যান। এই নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের তর্ক শুরু হয়। তিনি বলেন, আমরা উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা একসঙ্গে রয়েছি। আমরা এই ঘটনার বিচার দাবি করছি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সী বলেন, এডিপির বরাদ্দের জন্য প্রকল্প জমা দিয়েছেন চেয়ারম্যানরা। চেয়ারম্যানরা চাচ্ছিলেন এডিপির বরাদ্দের ৮০ শতাংশ তাদের দিয়ে দিতে। তারা তাদের মতো করে কাজ করবেন। কিন্তু আমরা কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে যেভাবে ধরা আছে সেভাবে করার জন্য চেয়ারম্যানদের বলেছি। কিন্তু তারা ৮০শতাংশ বরাদ্দ চাচ্ছিলেন। এনিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে। আপনার ভাতিজা চেয়ারম্যানদের মারতে উদ্যত হয়েছে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এরা এটার মধ্যে রঙ মেশাচ্ছে।

ইউএনও নাজিমুল হায়দার বলেন, এডিপির বাছাই কমিটির সভা ছিল। সভা প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। ইউপি চেয়ারম্যানরা বের হয়ে যাওয়ার সময় আড়াইসিধা ইউপি চেয়ারম্যানের একটি মন্তব্য নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। সভা চলাকালীন সময়ে চেয়ারম্যান ছাড়া কেউ ভেতরে আসেনি। বাইরে কিছু হয়ে থাকতে পারে। কম্বল বিতরণের নিয়ে একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হয়। এডিপির বরাদ্দ নিয়ে কিছু হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তীতে হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হানিফ মুন্সী একটি পক্ষে এবং আড়াইসিধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সেলিমসহ বাকি ইউপি চেয়ারম্যানরা আরেকটি পক্ষে ছিলেন।

Advertisement

Sorry, no post hare.

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com